নাটোরের সিংড়ায় নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িচাপায় সোহেল রানা নামের এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন তেল পাম্প এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচাপায় সাংবাদিক সোহেল রানা (৩৪) নিহতের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— বিআরটিএর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুজ্জামান এবং সিংড়ার ইউএনও সামিরুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিহত সোহেল রানা সিংড়া পৌর শহরের বালুয়া বাসুয়া মহল্লার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি আগপাড়া শেরকোল বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুরন্ত সংবাদের সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইউএনওর গাড়ি বেপরোয়া গতিতে সিংড়ার দিকে আসছিল। নিংগইন পৌঁছে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে চাকায় পিষ্ট হন সাংবাদিক সোহেল। পরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কলেজে যান ইউএনওর সহধর্মিণী মানসী দত্ত। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ি দুটি জব্দ করে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার স্ত্রীকে তার গাড়িতে কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, নলডাঙ্গা ছোট উপজেলা। এখানে পেট্রল পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই চালককে পাঠিয়েছিলাম সিংড়া থেকে পেট্রল আনতে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, নলডাঙ্গার ইউএনওর স্ত্রী মানসী দত্ত মৌমিতা সিংড়া গোলই আফরোজ সরকারি কলেজের প্রভাষক। স্বামীর সরকারি জিপ ব্যবহার করে তিনি তার কর্মস্থলে যাতায়াত করেন।
তবে ইউএনও সুখময় সরকার বলেন, সরকারি গাড়িতে তার স্ত্রী কলেজে যাননি। তেল নিয়ে ওই গাড়ি সিংড়ায় গিয়েছিল বলে দাবি তার।
নলডাঙ্গার ইউএনওর স্ত্রী মানসী দত্ত মৌমিতা সিংড়া গোলই আফরোজ সরকারি কলেজের প্রভাষক। স্বামীর সরকারি জিপ ব্যবহার করে তিনি তার কর্মস্থলে যাতায়াত করেন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর ই আলম সিদ্দিকী জানান, ইউএনও সুখময় সরকারের স্ত্রী মানসী দত্ত মৌমিতা সিংড়ার গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। সোমবার সকালে মানসী কাজে যেতে সরকারি গাড়িতে চড়ে রওনা হন। সিংড়ায় পৌঁছানোর আগে নিংগইন তেল পাম্প এলাকায় ইউএনওর গাড়িটি বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে আহত হন সাংবাদিক সোহেল রানা।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে নেয়ার পথে দুপুর ১টার দিকে সোহেল মারা যান। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ইউএনও সুখময়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিংড়ার ইউএনও এম এম সামিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা সোহেলের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। কেন সেখানে সরকারি গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? চালক কে ছিল? সে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল কি না? তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদ্যই স্ত্রীকাণ্ডে ফেঁসে আছেন রেলমন্ত্রী। এবার ইউএনও। আমাদের দেশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেশের সবকিছু যেন একান্তই নিজেদের করে নিয়েছেন। এততটাই যতটা হলে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে হয়। ক্ষমতা ও পদ ব্যবহার করে পারিবারিক চাহিদা মেটানোতেই তারা ব্যস্ত থাকেন, সরকারি সম্পত্তি নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন, দেশ পরিচালনার কথা মাথায় থাকে না কেবল। হাল ছেড়ে দেওয়া রাষ্ট্রে এসব এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়ে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫১
আপনার মতামত জানানঃ