ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একটানা লকডাউন বিশ্বজুড়ে আর্থিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়৷ বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে লকডাউনে৷ কাজকর্ম বন্ধ থাকায় উপার্জন হারিয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক-কর্মচারী৷ খাবার কেনার অর্থটুকুও নেই। প্রতিদিনের সংসারের খরচ জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ওপর ফুটপাতের হোটেলগুলো বন্ধ। প্রাতিষ্ঠানিক হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা আছে শর্ত মেনে। সেখানে বসে খাবার খাওয়া বারণ। তা ছাড়া ওই সব রেস্তোরাঁয় খাওয়ার আর্থিক সংগতিও নেই। এ অবস্থায় রাজধানীর হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষগুলো বিপাকে পড়েছে। এই সব মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির এই সংকটকালে শ্রমজীবী ও দরিদ্রদের জন্য এই ক্যান্টিন খুলেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অঙ্গসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়ন। রাজধানীর পল্টনে সিপিবি কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে একটি এবং মিরপুর ও কাফরুল এলাকার দুইটি ক্যান্টিন থেকে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করলে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেয় ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়ন। সরকারের বিধিনিষেধ বা লকডাউন যতদিন চালু থাকবে, ততদিন এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
ছাত্র ও যুব ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, প্রতিদিন দুপুর ও রাতে পল্টন মোড়ে আটশ, কাফরুলে সহস্রাধিক এবং মিরপুরে দুই হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে তারা খাবার বিতরণ করছেন। খাবার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে খিচুড়ি-ডিম ও বিশুদ্ধ পানি। সিপিবি’র কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে এবং জনগণের অনুদানের টাকা দিয়ে এই খাবার রান্না করা হচ্ছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে শ্রমজীবী ক্যান্টিনে প্রতিদিনই বেশকিছু মানুষ দুই বেলা বিনা পয়সায় খাবার পাচ্ছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পুরানা পল্টন মোড়ে মুক্তি ভবনের নিচে এই ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ খুলেছে বামপন্থী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। শ্রমজীবীদের মধ্যে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহের জন্য গত ৬ এপ্রিল এই ক্যান্টিন চালু হয়েছে। সকাল থেকে সংগঠনের কর্মীরা বাজার ও রান্নার কাজ শুরু করেন। দুপুর থেকে খাবার বিতরণ শুরু হয়। চলে রাতে খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। রান্নার পর প্যাকেট করে খিচুড়ি-ডিম ও বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়। কেউ কেউ বাড়িতেও নিয়ে যান।
ক্যান্টিনের সব ধরনের কাজ করছেন ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়ন কর্মীরা। বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না করে শ্রমিকের হাতে খাবার তুলে দেওয়া পর্যন্ত তারা শ্রম দিচ্ছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। খাবার বিতরণের পাশাপাশি করোনা সচেতনতা নিয়েও কাজ করছেন তারা। মাস্কও বিতরণ করা হচ্ছে।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘লকডাউনে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকারদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। আমরা ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিনা মূল্যে দুই বেলা খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
সরকারের বিধি-নিষেধ বা লকডাউন যত দিন চালু থাকবে তত দিন এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম। তিনি জানান, জনগণের অনুদানের টাকায় শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালু হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। মিরপুর এবং কাফরুলেও একই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব থানার পাশাপাশি সারা দেশে এই কার্যক্রম চালু করা হবে।
সিপিবি’র আরেক নেতা জানালেন, কেবল ঢাকা শহর নয়, পর্যাপ্ত তহবিল পেলে সারা দেশেই এ ধরনের কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে পার্টির নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখন পর্যন্ত।
জানতে চাইলে সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউনের শুরু থেকেই দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিউনিস্ট পার্টি ও অঙ্গসংগঠনগুলো জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শ্রমজীবী মানুষের জন্য ক্যান্টিন খোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ঢাকাসহ দুয়েকটি জেলায় এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি আমরা শিগগিরই আরও অন্যান্য জেলায় এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারব।
শুরু হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থেকে। এই উদ্যোগে পথ দেখিয়েছে সিপিএমের যাদবপুর এরিয়া কমিটি৷লকডাউন শুরু হওয়ার পরপরই তারা খুলেছে শ্রমজীবী ক্যান্টিন৷ গত বছরের ২ এপ্রিল থেকে হাঁড়ি চড়েছে রান্নাঘরে৷ একটানা এক বছরেরও বেশি মাত্র ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেট ভরা খাবার। তারপর ধীরে ধীরে শুধু কলকাতাই নয়, রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এই উদ্যোগ। ভারত ছাড়িয়েও তা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে এই খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বিনামূল্যে। জনগণের অনুদানের টাকা দিয়ে এই খাবার রান্না করা হচ্ছে। তাই চাইলে আপনিও আর্থিক অনুদান দিয়ে এই মহতী উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন এর যৌথ উদ্যেগের এই ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’ এ সাহায্য পাঠানোর মোবাইল নম্বর সমূহঃ
০১৭৫৪-১৭৮৮১৪ বিকাশ পার্সোনাল
০১৭১০-২০৮০৪৪ বিকাশ পার্সোনাল
০১৯১৩-৩৮৩৮৪০ বিকাশ পার্সোনাল
০১৬৪৬-৭৩৭০৬৪৯ রকেট পার্সোনাল
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ