মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের মধ্যেই অনুপ্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফায়দা লুটতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অনৈতিক মন্তব্য করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করে মন্তব্য করেছে ভারতের বিভিন্ন নেতা। তবে এবার অমিত শাহকে এক হাত নিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
কী মন্তব্য করেছিলেন অমিত শাহ?
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের উন্নয়ন হলেও তার সুফল বড়লোকদের কাছে পৌঁছেছে, সীমান্ত এলাকার গরিব মানুষদের কাছে নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
তিনি বলেন, সেই কারণেই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ না খেতে পেয়ে ভারত চলে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকএ হারিয়ে রাজ্যটির ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশকে বড় ইস্যু বানিয়েছে বিজেপি। তারই অংশ হিসেবে অমিত শাহ’র এই মন্তব্য।
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সীমান্ত এলাকায় নিচুতলায় পৌঁছায়নি। পিছিয়ে পড়া যে কোনও দেশে উন্নয়ন হতে শুরু করলে সেটা প্রথম কেন্দ্রে হয়। আর তার সুফল প্রথমে বড়লোকদের কাছে পৌঁছায়, গরিবদের কাছে নয়। এখন বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, ফলে গরিব মানুষ এখনও খেতে পাচ্ছে না। সে কারণেই অনুপ্রবেশ চলছে। আর যারা অনুপ্রবেশকারী, তারা যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই থাকছে, তা নয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। জম্মু-কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা শুধু এই রাজ্যের নয়, গোটা দেশের জন্য চিন্তার। আগামী ১০ বছর পর কলকাতার নাগরিকও অনুপ্রবেশ থেকে বাঁচতে পারবে না।
তিনি বলেন, কেউ সীমান্ত পেরিয়ে এলে কোথায় থাকে? কারা তাদের আশ্রয় দেয়? বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি করে। কিন্তু যদি কেউ ভিতরে ঢুকে পড়ে, তা হলে কে দেখবে? গরু পাচার কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না?
আমরা আসামে এই বাস্তুতন্ত্রটা হাতেকলমে করেছি। বেড়ার উপর ক্যামেরা লাগিয়েছি। তার সংযোগ পুলিশ থানায় দিয়েছি। জেলাশাসক, বিএসএফ এবং থানা— তিন পক্ষের উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যামেরার ফুটেজ দেখার জন্য। সেই কারণেই অনুপ্রবেশ কমে ১০ শতাংশ হয়ে গেছে। এটা প্রমাণিত তথ্য। পশ্চিমবঙ্গেও এটা করতে হবে।
অমিত শাহ পরিষ্কার করে বলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে শরণার্থীদের সম্মানজনক ভাবে বাঁচার অধিকার দেব। এর ফলে বাংলার জীবনযাত্রারও অনেক পরিবর্তন হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভাল হবে।
তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকে এত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যে, পরিষ্কার বার্তা যাবে এখন অনুপ্রবেশ করা সহজ নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সমালোচনা
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর জ্ঞান সীমিত। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বাংলাদেশ তাদের দেশ থেকে অনেক এগিয়ে।
আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক যখন এতটা গভীর, তখন এ ধরনের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ ধরনের মন্তব্যে সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক জ্ঞানী লোক আছেন, দেখেও দেখেন না, জেনেও জানেন না। তবে তিনি (অমিত শাহ) যদি সেটা বলে থাকেন, আমি বলব, বাংলাদেশ নিয়ে তার জ্ঞান সীমিত। আমাদের দেশে এখন কেউ না খেয়ে মরে না। এখানে কোনো মঙ্গাও নেই।
সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের লোকদের ৫০ শতাংশের ভালো কোনো শৌচাগার নেই। আর আমাদের ৯০ শতাংশ লোকই ভালো শৌচাগার ব্যবহার করেন। তারা যদি এ ধরনের চিন্তা করে থাকেন, তাহলে আমি বলব, তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে।
আমার দেশের শিক্ষিত লোকের চাকরির অভাব আছে। তবে কম শিক্ষিত লোকের চাকরির অভাব নেই। আর ভারতের এক লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে চাকরি করে। তাই আমাদের ভারতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ