কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার আগামী দিনগুলোয় বিশ্ববাসীর জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে, না দুর্ভোগ বাড়াবে- তা নিয়ে বোদ্ধা মহলে রয়েছে প্রাঞ্জল বিতর্ক। বিজ্ঞানের দ্রুত উন্নতি মানব জীবনে যে প্রশান্তির পরশ বইয়ে দিয়েছে, তা আরও বেগবান হবে; নাকি মানব সভ্যতাকেই কোনো এক অজানা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে- এ নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন হয়ে উঠেছে একটি একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্র যেখানে পড়ানো হয় কিভাবে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার তৈরি করতে হয় যা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করবে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে।
কম্পিউটারকে মিমিকস কগনেটিক এককে আনা হয় যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মত ভাবতে পারে। যেমন শিক্ষা গ্রহণ এবং সমস্যার সমাধান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হল মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, এআই গবেষণার ক্ষেত্রটি “বুদ্ধিমান এজেন্ট” -এর অধ্যয়ন হিসাবে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে: যে কোনও যন্ত্র যা তার পরিবেশকে অনুধাবন করতে পারে এবং এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় যা কিছু লক্ষ্য অর্জনে তার সাফল্যকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেয়।
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন যখন একটি মেশিন “জ্ঞানীয়” ফাংশনগুলিকে কার্যকর করে যা অন্যান্য মানুষের মনের সাথে মিল থাকে, যেমন “শিক্ষা গ্রহণ” এবং “সমস্যা সমাধানের” সাথে সংযুক্ত।
আন্দ্রেয়ার কাপলান এবং মাইকেল হেনলিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞায় বলেন “এটি একটি সিস্টেমের বহির্ভূত তথ্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারার ক্ষমতা, এমন তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং ঐ শিক্ষা ব্যবহার করে নমনীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বিশেষ লক্ষ্য করা।”
মেশিনগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে সক্ষম হয়ে উঠে তখন মানসিক সুবিধার জন্য বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞা থেকে সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপটিক্যাল অক্ষর স্বীকৃতিটি “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার” উদাহরণ হিসাবে আর অনুভূত হয় না, তখন এটি একটি রুটিন প্রযুক্তি হয়ে ওঠে। বর্তমানে যে সক্ষমতাগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে সেগুলি মানুষের বক্তব্যকে সফলভাবে বুঝতে পারে, কৌশলগত গেম সিস্টেম (যেমন দাবা এবং যাওয়া) উচ্চতর স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চালাতে পারে, সামরিক সিমুলেশন এবং জটিল উপাত্ত ব্যাখ্যা করতে পারে।
এআই গবেষণাকে কতগুলো উপ শাখায় বিভক্ত করা যেতে পারে যা নির্দিষ্ট সমস্যা, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ সরঞ্জামের ব্যবহার বা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলির সন্তুষ্টির দিকে ফোকাস করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামগ্রিক গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তি তৈরি করা যার মাধ্যমে কম্পিউটার এবং মেশিনগুলি বুদ্ধিমান পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম হবে। বুদ্ধিমত্তার উত্পাদন (বা তৈরি) সাধারণ সমস্যাগুলোকে কয়েকটি উপ সমস্যায় বিভক্ত করা হয়েছে। যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি বা ক্ষমতাগুলি রয়েছে তা গবেষকরা একটি বুদ্ধিমান সিস্টেম প্রদর্শন করবে বলে আশা করেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক দিক
একসময় কম্পিউটারকে সংজ্ঞায়িত করা হতো বুদ্ধিহীন একটি যন্ত্র হিসেবে, যা কিনা কেবল মানুষের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। তবে কম্পিউটারের সেই সংজ্ঞা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
কম্পিউটার এখন মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মতোই বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে। অতীতে কম্পিউটার অনেক যান্ত্রিক কাজে মানুষকে পেছনে ফেললেও ‘কগনিটিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটির’ মতো মানবীয় বিষয়গুলো ছিল কম্পিউটারের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই ধারণাও এখন বদলে যাচ্ছে, লেখালেখি বা চিত্রকর্মের মতো অতিসংবেদনশীল সৃষ্টিশীল বিষয়ও এখন কম্পিউটার দখল করে নিচ্ছে।
অথচ মানুষ হলেই যে সবাই শিল্প-সাহিত্যের মতো বিষয়ে সৃষ্টিশীলতা দেখাতে পারেন, এমনটি নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন সঙ্গীত সৃষ্টি করছে, ছবি আঁকছে, উপন্যাসও লিখছে। জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রচিত একটি উপন্যাস মৌলিক সাহিত্য হিসেবে পুরস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনের বেস্টসেলার বইয়ের পুরস্কারগুলো দখল করে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যালগোরিদম।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা আঁকা একটি চিত্রকর্ম ৪,৩২,০০০ ডলারে বিক্রিও হয়েছে। চিত্রকর্মটির নিচে মানবশিল্পীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যালগোরিদম তার একটি স্বাক্ষরও করে দিয়েছে।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা আঁকা একটি চিত্রকর্ম ৪,৩২,০০০ ডলারে বিক্রিও হয়েছে। চিত্রকর্মটির নিচে মানবশিল্পীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যালগোরিদম তার একটি স্বাক্ষরও করে দিয়েছে।
সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পদচারণা। ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক টাইমস, এপি, রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারকে অটোমেটেড জার্নালিস্ট বা সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সংবাদ সংস্থা চালু হয়েছিল ২০০৮ সালেই, নতুন ধারার এই সাংবাদিকরা মানুষের চেয়ে কোনো দিকেই কম দক্ষ নয় বরং দ্রুততা এবং নির্ভুলতা মানুষের চেয়েও বেশি। চীনে ইতিমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভার্চুয়াল সংবাদ পাঠককে দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। এসব ঘটনা থেকে সহজেই বোঝা যায়, আগামীর গণমাধ্যম শিল্পের গতিপথ কোনদিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী দিনগুলোয় চিকিৎসাসেবায়, অফিস-আদালতে, শিল্প-কারখানায়, সংবাদসংস্থা বা গণমাধ্যমে, ভাষান্তর প্রক্রিয়ায়, টেলিফোন সেবায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ এমনকি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র তথা রোবটের ব্যাপক ব্যবহারের আভাস দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
রায়ান আয়ারস- যিনি ব্যবসায়িক কৌশলের গুরু হিসেবে খ্যাত, এক নিবন্ধে দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব সম্পর্কে ছয়টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন-
১. স্বয়ংক্রিয় পরিবহন ব্যবস্থায় ২. সাইবর্গ টেকনোলজি- যান্ত্রিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা মস্তিষ্ক দ্বারা চালিত হবে ৩. বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ৪. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে ৫. বন্ধুভাবাপন্ন রোবট ৬. বয়োবৃদ্ধদের উন্নত পরিচর্যায়। জানা যায়, জাপানে ইতিমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সংবাদ মাধ্যম কোম্পানি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখভালের বিষয়টি বুদ্ধিমান মেশিনের ওপর ছেড়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ২০৪৯ সালের মধ্যে রোবট বেস্ট সেলার বুক লিখতে সক্ষম হবে। যদিও জাপানে বুদ্ধিমান মেশিনের রচিত ছোট উপন্যাস সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ইতিমধ্যে বিবেচিত হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেছেন, আগামী ১২০ বছরের মধ্যে মানুষের সব কাজ বুদ্ধিমান মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারবে।
ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলা করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই। তবে বর্তমানে প্রযুক্তিটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ১০ থেকে ২০ বছর লেগে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আয়োজনে ‘দাভোস অ্যাজেন্ডা মিটিং’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে পিচাই এসব কথা বলেন।
সুন্দর পিচাই বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহতা যেমন আপনারা দেখছেন, তেমনই দেখছেন অর্থনীতি সচল রাখতে প্রযুক্তি কেমন ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক দশকের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর নির্ভর করেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ হচ্ছে।’
ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে সুন্দর পিচাইকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভ্যাকসিন বিতরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাহায্য করতে পারবে কি না। উত্তরে পিচাই বলেছেন, ‘আজ আমাদের হাতে এই কাজে সাহায্য করার জন্য টুলস আছে। যেমন ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং এবং অ্যালগোরিদম। তবে এসব এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।’
পিচাইয়ের মতে, বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান কোনো একক দেশ করতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে যেমন প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট করা হয়েছে, তেমনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো প্রযুক্তির সাহায্যে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর সে কাজে প্রয়োজনে অতিরিক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রচুর ক্ষতি হলেও ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এটি বিরাট ভূমিকা রেখেছে। কোভিড–১৯ রোগীর অবস্থান অনুসরণ, রোগী শনাক্তকরণ, শারীরিক পরীক্ষা করা, মহামারি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া, ঘরে বসে অফিসের কাজ করা, ই-কমার্স চালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফোরআইআর প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহ আগেই প্রথম একটি এআই প্ল্যাটফর্ম এ ভাইরাসের মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ শনাক্ত করে। তখন থেকেই এ মহামারির গতিধারা বিশ্লেষণে এআই কাজ করে যাচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজীবনের জন্য হুমকি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) রয়েছে এমন রোবট কিংবা সেবা মানবজীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পদ্ধতি দারুণ কিছু উদ্ভাবন কিংবা নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নে সহায়তা রাখছে এটি যেমন সত্য, তেমনি মানবজীবনের জন্যও এআই হুমকিস্বরূপ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।
মাইক্রোসফট রিসার্চের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের প্রধান এরিক হরভিটজ এ বিষয়ে বলেন, আমরা নানা ধরনের গবেষণা করে যাচ্ছি এবং দেখা যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিতে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণও একসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বিষয়টি যে নাও ঘটতে পারে সেটিও উল্লেখ করে এরিক জানান, এমনই যে হবে এমনটাও নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি এআই পদ্ধতি গবেষণার ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছেন; যেটি সহজেই শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করে কবে মানুষের মৃত্যু হবে, সেটা গণনা করে বলে দেবে। আশঙ্কার কথা, ৫০টিরও বেশি দেশ যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য রোবট তৈরি করছে- যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করবে এবং শত্রুকে হত্যার কাজটি করবে। এ ধরনের রোবট এবং ড্রোনের গবেষণায় প্রচুর অর্থও ব্যয় করা হচ্ছে।
স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছেন; যেটি সহজেই শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করে কবে মানুষের মৃত্যু হবে, সেটা গণনা করে বলে দেবে। আশঙ্কার কথা, ৫০টিরও বেশি দেশ যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য রোবট তৈরি করছে- যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করবে এবং শত্রুকে হত্যার কাজটি করবে। এ ধরনের রোবট এবং ড্রোনের গবেষণায় প্রচুর অর্থও ব্যয় করা হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি নীতি গবেষণা কেন্দ্র ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ জানিয়েছে আগামী ৪ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের মধ্যে রোবটের কারণে বিশ্বজুড়ে সাড়ে ৭ কোটি লোক চাকরি হারাবে।
আরেক গবেষক ম্যাককিনস জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের ভেতর বিশ্বের ৮০ কোটি চাকরি দখল করে নেবে রোবট। বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি যে কেবল চাকরি দখল করছে তা নয়, ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ৫০০টি নেতৃত্বস্থানীয় কোম্পানি তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে, অর্থাৎ যন্ত্র এখন মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে একবিংশ শতাব্দীর সাড়া জাগানো বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, এরা এক সময়ে আমাদের অতিক্রম করে যাবে। এর ফলে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে এর স্রষ্টাকে অতিক্রম করতে পারে এবং তা মানবজাতির জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন কৌশল এমন স্তরে পৌঁছবে, যাতে মানুষের সাহায্য ছাড়াই এরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারবে। আর যদি এমনটি ঘটে, তাহলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণের সম্মুখীন হতে হবে; যার ফলে যান্ত্রিক বুদ্ধি আমাদের অতিক্রম করবে।
Space X-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নকে ‘Summoning the Demon’ অর্থাৎ দৈত্যকে ডেকে আনার শামিল আখ্যায়িত করে এটাকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি এটাকে আণবিক বোমার চেয়েও অধিক বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রণ আরোপের আহ্বান জানান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রুখতে নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলা। আর কীভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে পারে, তা নিয়ে আগেই ভাবা উচিত। শুধু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করলেই চলবে না, সে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন মানবসভ্যতার বিপক্ষে না যায়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের সঙ্গে পৃথিবীর পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্পর্কটি বিজ্ঞানীরা হিসাবে এনেছেন কিনা- সে বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে যেসব সরঞ্জামের জোগান লাগবে এবং ব্যবহারের পর অকেজো হয়ে পড়া এসব যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ যখন বর্জ্যে পরিণত হবে, এ উভয় ক্ষেত্রেই পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রসার অন্যান্য সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক বিপর্যয়ের সঙ্গে পরিবেশের দূষণের মতো ভয়াবহ বিষয়টিও ঘটতেই থাকবে। শুধু পলিথিন এবং পেট বোতলের জঞ্জালই প্রশান্ত মহাসাগরসহ অন্যান্য সাগর-মহাসাগরকে মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সাগরের নীল জলরাশিতে বেঁচে থাকা প্রাণীকুলসহ উদ্ভিদরাজি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অধিকন্তু হাল জামানার কম্পিউটার, মোবাইলসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বর্জ্য পরিবেশকে যেভাবে ভারাক্রান্ত করছে, তাতে আগামী পৃথিবীর পরিবেশ-প্রতিবেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে; তা নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে বৈকি! ইতিমধ্যে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের যে নমুনা দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে, তাতে পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ঘনীভূত হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে পিপার নামের হেঁটে-চলে বেড়ানো একটি রোবটকে শিক্ষাবিষয়ক কমিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ বিষয়ক শুনানিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
শুনানিকালে কমিটির সদস্যরা পিপারকে জিজ্ঞেস করেন, যখন বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাজত্ব চলবে, তখন কি মানুষের জন্য কোনো জায়গা থাকবে? জবাবে পিপার কমিটির সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেছে, সব সময়ই সূক্ষ্ম কিছু দক্ষতার প্রয়োজন পড়বে, যা কেবল মানুষেরই থাকে। এসব দক্ষতার মধ্যে রয়েছে বোধশক্তি এবং প্রযুক্তি তৈরি ও পরিচালনা।
পিপার নামক যন্ত্রমানব যাই বলুক না কেন, প্রকৃত প্রস্তাবে পৃথিবীব্যাপী কর্মক্ষম মানুষগুলোকে অকর্মণ্য করে দেয়ার মধ্যে কোনো ভালো কিছু খুঁজে বেড়ানো বুদ্ধির পরিচায়ক নয় নিশ্চয়ই। অলস মস্তিষ্ক যেমন শয়তানের কারখানা, তেমনি কর্মহীন মানুষগুলো সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যা এই পৃথিবীকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে- এটি কারও কাম্য হতে পারে না।
তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অযাচিত প্রসার রোধকল্পে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পৃথিবীর বিবেকবান গবেষক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, সর্বোপরি বিশ্ব নেতৃবর্গকে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্বায়ন
মহামারিজনিত লকডাউন, ডিজিটালাইজেশন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন–ফোরআইআর)—এই সবকিছুই বৈশ্বিক শাসন ও পরিচালনব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিচ্ছে। যেহেতু বিশ্বের প্রযুক্তি নেতারা একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক নেতাও হয়ে উঠতে যাচ্ছেন, সেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সংক্ষেপে এআই) মতো সর্বাধুনিক বা সর্বসাম্প্রতিক খাতে প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে কোভিড–১৯ মহামারির পরে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের দৌড়ে প্রাথমিক ধাপ হবে ফোরআইআর প্রযুক্তির প্রতিযোগিতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের দিক থেকে এক নম্বরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে চীন। এর বাইরে রাশিয়াসহ অন্য কিছু দেশও শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞান একটিমাত্র কোষ থেকে সম্পূর্ণ মানবদেহ গঠনের রহস্য জানার চেষ্টা করে আসছেন। তারা জীনগত রোগ, গর্ভপাত এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ জানার চেষ্টাও করছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এবার পরীক্ষাগারে মানবভ্রূণের আদিদশা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন কৃত্রিম ‘এমব্রায়ো’ বা ভ্রূণ ‘ব্লাস্টয়েড’। এই ব্লাস্টয়েড থেকেই মানবশরীর, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হবে। মূলত দুইটি নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে তারা এখন অব্দি সবচেয়ে পরিপূর্ণ ‘মডেল ভ্রূণ’ তৈরি করতে পেরেছে।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই উন্নয়নে চীন বিশাল ভূমিকা রাখলেও এ খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে তার আরও অনেক কিছু করার আছে। গবেষণা বলছে, তিনটি ক্ষেত্রে চীন এখনো পিছিয়ে আছে। সেগুলো হলো হার্ডওয়্যার, গবেষণা এবং বাণিজ্যিক খাত।চীন এ খাতে (চিপ ও ইলেকট্রিক কার উৎপাদনসহ) ইতিমধ্যে ৩০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। দেশটি ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় উদ্ভাবন কৌশলনীতি গ্রহণ করেছে এবং এসব তৎপরতার মাধ্যমে তারা বাইডু, আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো বিশাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাইরে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোও ফোরআইআর উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকেছে। যেমন, যুক্তরাজ্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করে এআই প্রস্তুতির দিক থেকে শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। একইভাবে এশিয়ার অনেক দেশ এআই এবং রোবট প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় রোবটের ব্যবহার অনেক গুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ১০ হাজার কর্মী গড়ে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদনে সক্ষম, ৭৭৪টি রোবট একই পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে পারে। গাড়ি প্রস্তুত করার দিক থেকে আগে থেকেই জাপান শীর্ষস্থানে। তারা এখন এই শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এমন পর্যায়ে ইতিমধ্যেই নিয়ে এসেছে যে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে গাড়ি উৎপাদনের কারখানায় মানুষের সরাসরি উপস্থিতি প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মঈদুল ইসলামের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু এখানে আইনগত ভিত্তির জায়গাটি এখনও ফাঁকা। এটি নিয়ে ভাবা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। বাইরের দেশে এ নিয়ে কি ভাবা হচ্ছে জানি না। আমাদের দেশে তথ্য-প্রযুক্তি আইন হয়েছে ২০০৬ সালে। সম্প্রতি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ দিয়ে হয়তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনের মানুষকে ধরা সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ কোনো যন্ত্রকে ধরার সুযোগ নেই। যন্ত্রকে যেহেতু প্রোগ্রামিং করছে মানুষ তাই কোনো অঘটন ঘটলে নেপথ্যের মানুষকে দায়ী করা যাবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি চলে যাচ্ছে দুর্বৃত্তদের হাতে। এ কারণেই আইন জরুরি হয়ে পড়েছে। কোন কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা যাবে কোনটাতে যাবে না- এর একটি নীতিমালা থাকা দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ আইন তো দূরে থাক
সাবেক এই বিচারকের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ আইন তো দূরে থাক- ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটিই এখনও আপডেট হয়নি। অডিও-ভিডিওকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের কথা বলা হযেছে। অথচ অডিও-ভিডিওটা আসল না নকল, এটি কিভাবে পরীক্ষা হবে বলা আইন সেখানে নীরব।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের একটি প্রোটেকশন থাকা দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহারকারী দেশগুলোতে নিশ্চয়ই এটির আইনগত একটি অবস্থান রয়েছে। সেসব দেশে এ ক্ষেত্রে কাকে ‘রেসপন্সিবল’ করা হয়েছে জানতে হবে। সেসব পর্যালোচনা করে আমাদের দেশেও এআই’র আইনগত সুরক্ষা জরুরি। প্রতিকারের জায়গা থাকতে হবে। না হলে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলামের মতে, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে অনেক দেশে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণে পৃথক বিভাগ খোলা হয়েছে। আমাদের দেশে তথ্য-প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ক্রমবিস্তৃত হলেও এখন পর্যন্ত আইনগত বিষয়টি ভাবাই হয়নি। আইন করার মতো আইনজ্ঞও পার্লামেন্টে নেই। নিত্যনতুন জরুরি বিষয়ের ওপর আইন করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নেই। তাদের পার্লামেন্টে নেয়াও হচ্ছে না। অনেকটা আইন ছাড়াই যেন দেশ চলছে!
তিনি বলেন, যোগাযোগ প্রযু্িক্তর কল্যাণে এখন পৃথিবী এক হয়ে গেছে। অন্যদিকে বহুল ব্যবহৃত ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসআপ, টুইটারের নিয়ন্ত্রণ এ দেশের হাতে নেই। তথ্য-প্রযুক্তির উপযুক্ত আইনই নেই। যেটুকু রয়েছে সেটি শুধু মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার আইন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বাংলাদেশস্থ এই আইনজীবী বলেন, ডমেইন যেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোও চলছে আইন ছাড়া। আমরা যেন এগুলো নিয়ে এখনও ভাবাই শুরু করিনি। যেখানে তথ্য-প্রযুক্তি কোথায় চলে গেছে, সেখানে আমরা এখনও আইন নিয়েই ভাবতে পারছি না। আইন না থাকলেই যেন সুবিধা!
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৮
আপনার মতামত জানানঃ