ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার(১০ এপ্রিল) সকালে রাজ্যের ৫ জেলার ৪৪টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এদিকে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে রাজ্যের কুচ বিহার জেলায় বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা
জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ জেলার ৪৪টি কেন্দ্রে শনিবার বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট শুরু হয়েছে। ভোট চলবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত।এর আগে গত ২৭ মার্চ প্রথম দফা, ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা এবং ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট আট দফায় এবার রাজ্যটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার নয় এবং আলিপুরদুয়ারের ৫টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি, হাওড়া জেলার ১৬টির মধ্যে নয়টি এবং হুগলির ১৮টির মধ্যে ১০টি আসনে ভোট হচ্ছে।
এ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৪৫ প্রার্থী। ভাগ্য নির্ধারণ হবে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত, কাঞ্চন মল্লিক, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, লাভলী মৈত্রী, লকেট চট্টোপাধ্যায় মতো তারকা প্রার্থীদের। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ৪৫টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে পশ্বিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোচ বিহারে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে।
তৃণমূলের অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় মাথাভাঙা হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত চলছে।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সিআরপিএফ জওয়ানরা বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে। রাতভর মদ-মাংস খেয়ে সকালে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। যাদের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচন করানোর দায়িত্ব তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে।
স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলে দলে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন মানুষ। সেই সময় বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের ভেতরে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল, তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল।
অন্য দিকে, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া নিশীথ প্রামামিক গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন। তার বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যে ভাবে লাগাতার উস্কানিমূলক মন্তব্য দিচ্ছেন মমতা, তার জন্য মানুষ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তাতেই গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে সিআইএসএফ।
স্থানীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সিআরপিএফ নয়, গুলি চালিয়েছে সিআইএসএফ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুধু চারজনই নয়, আরও বেশ কয়েকজন এসময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতেই ওই চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কোচবিহারের শীতলকুচি আসনের জোড়পাটকি ভোটকেন্দ্রের ১২৬ নং বুথের বাইরে গুলিবর্ষণের এই ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। নিহতরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে মাথাভাঙা হাসপাতালে নিহতদের মধ্যে ৩ জনের মৃতদেহ নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভিড় করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল শীতলকুচি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গাড়িতে হামলার পর থেকে সেই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। আর ভোটের দিন সকাল থেকে জোড়পাটকি এলাকা উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বিজেপি ও তৃণমূলের উত্তেজনার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় চারজন।
এর আগে গত মঙ্গলবার(৬ এপ্রিল) দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা আর বুথ দখলের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, মঙ্গলবার ভোট পড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। একই সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়ে।
তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার সকালে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলী জেলার ৩১ আসনে একযোগে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। কোথাও চলে প্রার্থীর ওপর হামলা, আবার কোথাও কোথাও এজেন্টকে মারধর করে আতঙ্ক তৈরির মতো ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়।
তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ২০৫ জন প্রার্থী। নির্বাচনের তৃতীয় দফায় কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলী জেলার ৩১ আসনে ২০৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপিয়া অধিকারী ও তনুশ্রী চক্রবর্তীর মতো তারকা এবং রাজনীতিকরা।
গত ২৭ মার্চ প্রথম দফা এবং ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হন। আগের দুই দফায় ৬০ এবং তৃতীয় দফায় ৩১ আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও পরবর্তী পাঁচ দফায় বাকি ২০৩ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। এদিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করেই ভোট উৎসব শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। আজ ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৮ দফা শেষে ২ মে প্রকাশ করা হবে ১৭তম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এই ৪৪টি আসনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল ৩৯টি। বিজেপি’র হাতে ছিল মাত্র একটি এবং বামদের দখলে ছিল ৩টি আসন। আর তাদের জোট শরিক কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল একটি আসন।
অবশ্য ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলে বিধানসভাভিত্তিক ফলের হিসাব অনেকটা বদলে গেছে। এই ৪৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৫টি এবং বিজেপি ১৯টি আসনে এগিয়ে। তবে সে সময় পৃথক ভাবে লড়াই করা বাম-কংগ্রেসের হাতে কোনো আসনই নেই।
প্রথম তিন দফার ভোটে উত্তেজনা ছড়ানোর পর চতুর্থ দফার ভোটে আরও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চতুর্থ দফায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শনিবারের ভোটে বুথে মোতায়েন আছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোট ৭৯৩ কোম্পানি সদস্য।
এছাড়া কলকাতা পুলিশের অধীন এলাকায় ৯৪ কোম্পানি, আলিপুরদুয়ারে ৯৬, কোচবিহারে ১৮৩, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটে ৯৯, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলায় ৩৮, হাওড়া গ্রামীণে ৩৫ এবং বারুইপুর পুলিশ জেলায় ৪৪ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে থাকবে ৭৯ কোম্পানি। এছাড়া অন্যান্য দায়িত্বপালনে আধাসামরিক বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ