বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা, বোমাবাজি, বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে সহিংসতা ও নিহত বাড়ছেই। ফল ঘোষণার দিন রোববার দুপুর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১২ জন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি।
নিহতদের মধ্যে বিজেপির পাঁচ, তৃণমূলের পাঁচ ও আইএসএফের একজন রয়েছেন বলে জানা গেছে। দ্বাদশ ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বহু জায়গায় একে অন্যের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, বোমাবাজি, লুটপাট, আগুন লাগানোর অভিযোগ করেছে বিজেপি ও তৃণমূল। এ পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর কাছে বারবার শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
রাজ্যে সহিংসতার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে রক্তপাতের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে বুধবার মমতা শপথের দিন পশ্চিমবঙ্গে ধিক্কার দিবস এবং দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিজেপি। ধিক্কার দিবসের কর্মসূচিতে যোগদান এবং আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের দেখতে মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গ যাচ্ছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কাছ থেকে প্রতিবেদন চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে বিজেপির রাজ্য প্রধান দিলীপ ঘোষ এবং সন্ধ্যায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক ধরে বৈঠক করেন রাজ্যের গভর্নর জগদীপ ধানখড়।
সোমবার সন্ধ্যায় মমতা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিষয়টি তোলেন রাজ্যপাল। মমতা তাকে বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে রয়েছে। তবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যা করার করছেন এবং করবেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “এতো বিপুল সমর্থন নিয়ে তৃণমূল জিতেছে তারপরেও কেন হিংসা। পুলিশের সামনে আগুন, লুটতরাজ হচ্ছে কিন্তু পুলিশ কিছু বলছেনা। এটা মেনে নেয়া যায় না”।
জানা গেছে সহিংসতায় শীতলকুচি, দীনহাটায়, কলকাতায় ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় এক জন করে নিহত হয়েছে যাদের বিজেপি তাদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছে।
বিজেপি জানিয়েছে, সহিংসতায় তাদের অন্তত ছয় কর্মী নিহত হয়েছে। এছাড়া হামলার শিকার হয়েছে আরও অনেকে। অনেকের বাড়িঘর ও দলীয় অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এদিকে তৃণমূল জানিয়েছে, বিজেপি কর্মীরা তাদের অন্তত পাঁচ সমর্থককে হত্যা করেছে। এর মধ্যে শুধু পূর্ব বর্ধমানেই তিন জনকে হত্যা করা হয়েছে। হুগলিতে নিহত হয়েছে আরও একজন।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে বাম-কংগ্রেসের অংশীদার ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর এক কর্মী নিহত হয়েছে।
এদিকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের শান্তির, সংস্কৃতির একটা ধারা আছে। সেটাকে বজায় রাখতে হবে। বিজেপি এর পরেও গোলমাল করছে। আমি বলছি শান্ত থাকুন। এখন প্রয়োজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রাজ্যে করোনা সংক্রমণে প্রচুর মানুষ বিপদে পড়েছেন। এই বিষয়টা আমাদের আগে দেখতে হবে। বিজেপি-র বুঝতে হবে তারা শাহেনশা নয়। এসব মানুষ ঠিক করে। আমরা ৩৬৫ দিন মানুষের কাজ করি। মানুষকে উজ্জীবিত করি। মোদির অশ্বমেধের ঘোড়া রাজ্যের জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ রুখে দিয়েছে। বাংলার মায়েরা ও তরুণরা পারে বিজেপিকে রুখে দিতে। বিজেপিকে রুখে দেওয়ার সব কৃতিত্ব জনগণের।’
তিনি বলেন, ‘বর্ধমানে তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছে বিজেপি। কোচবিহারে আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। কোচবিহারের এসপি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। কয়েকজন পুলিশ বিজেপির হয়ে আসরে নেমেছিল। সেইসব পুলিশ অফিসার মনে করে ঠিক কাজ করেছে, আমি মনে করি না। আইন সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের। এটা পরে বুঝবো।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি আহ্বান জানিয়েছেন, এটা ভালো দিক। পরিস্থিতি যদি শান্ত না হয়, তবে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ধর্ণায় যোগ দেবো। নির্বাচনি ফলাফলের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আমাদের দলের কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় জন কর্মী মারা গেছে। হাজারখানেক বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। জয়ের পরেও তৃণমূলের এই সহিংসতা কেন?’
রবিবার রাজ্যটির ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২ টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে তৃণমূল পায় ২১৩ টি আসন, ৭৭ আসনে জয় পায় বিজেপি, ১টি আসনে জয় পায় সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী, অন্যরা ১টি।
এদিকে নির্বাচনে জয়ী তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী কাল বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আবারো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য আড়ম্বরহীন শপথ অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ