পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রচার ক্রমশ তারকাময় হয়ে উঠছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হয়ে প্রচারে ইতিমধ্যে মাঠ গরম করছেন বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী। তার সঙ্গে পাল্লা দিতে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী প্রচারে নিয়ে এসেছে বলিউড তারকা জয়া বচ্চনকে। বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের হয়ে আজ সোমবার(৫ এপ্রিল) থেকে প্রচারে নামছেন তিনি।
কিছুদিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। বিজেপিতে ভিড়ে মিঠুন চক্রবর্তী পদ্ম ফুলে ভোট চেয়ে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিদিনই তিনি রোড শোতে অংশ নিচ্ছেন। একসময় (২০১৪-১৬) মিঠুন ছিলেন তৃণমূলের মনোনীত ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ। গত ৭ মার্চ কলকাতায় নরেন্দ্র মোদির ব্রিগেড সমাবেশের দিন মিঠুন বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু মিঠুন একাধিকবার বলেছেন তিনি রাজনীতির জগতের লোক নন।
অন্যদিকে জয়া বচ্চন যেমন অভিনেত্রী, তেমনই রাজনৈতিক জগতের মানুষ। সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জয়া। রাজনীতি দীর্ঘদিনের বিচরণক্ষেত্র তার। মমতার সঙ্গে সুসম্পর্কও বহুদিনের। কর্মসূত্রে মুম্বাইয়ে থাকলেও, মমতার ডাক পেয়ে বারবার এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে।
জানা গেছে, রোবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছেছেন জয়া। কেন তৃণমূলের হয়ে প্রচারে জয়া বচ্চন, সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেই বলবেন।
জয়া বচ্চনকে তৃণমূলের সংসদীয় দল সংবর্ধনা জানাবে। আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতাতেই থাকবেন জয়া। আর ৫, ৬, ৭ এপ্রিল এই তিনদিনই রাজ্যজুড়ে মমতার হয়ে নিরন্তর প্রচারের কাজ করবেন তিনি।
মমতার হয়ে প্রতিদিন দু’টি করে বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার করবেন তিনি। তবে তার আগে সোমবার টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে অরূপ বিশ্বাসের হয়ে প্রচার করবেন। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে জয়া বচ্চনের এই প্রচারকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘বাংলার সঙ্গে কি জয়া বচ্চনের আদৌ সম্পর্ক আছে? উনি বাংলার জন্য কী করেছেন? আসেননি, থাকেননি কলকাতায়। তবু তৃণমূল মনে করছে সেই ধন্যি মেয়ে ছবির অভিনেত্রী জয়া বচ্চন এবার কলকাতায় তৃণমূল প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী ঝড় তুলতে পারবেন!’
এবারে নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান ‘বাংলার নিজের মেয়ে’-কেই চায়। তাই জয়া বচ্চনের মতো বাংলারই এক মেয়েকে প্রচারের কাজে এনে ‘শিল্ড’ জেতাতে চাইছে তৃণমূল। ২০০৪ সাল থেকে সমাজবাদী পার্টির হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন জয়া। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেমন বচ্চন পরিবারের সখ্যতা খুব ভালো, তেমনই সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবও বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জয়ার এই প্রচারে রাজনৈতিক দিক থেকেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে তৃতীয় দফা ভোটের আগে সোমবার ফের ম্যারাথন ভোট প্রচারে নেমেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চুঁচুড়া, চণ্ডীতলা, উত্তরপাড়া ও ভাঙড়ে যাবেন মমতা। প্রথম সভা থেকে এদিন ফের একবার বিজেপিতে তোপ দাগেন মমতা।
তার দাবি, ‘গুজরাতিরা বাংলার শাসন করবে না, বাঙালিরাই করবে। কেন ৮টি দফায় নির্বাচন? ২ দফাতেই নির্বাচন হয়ে যায়। কী চায় বিজেপি? চালাকি চলবে না। কোভিড হয়েছে বলে বিজেপি বন্ধ করতে চাইবে। কিন্তু এই চালাকি চলবে না, নির্বাচন যখন শুরু হয়েছে, তখন শেষ করতে হবে। কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী দিয়েছি। সর্বত্র ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা করা হচ্ছে। বলছে আয়ুষ্মান, আয়ুই নেই, তার আবার আয়ুষ্মান। এর পর রেশন দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া হবে। তৃণমূলের সরকার হলে হাত খরচ পাবেন মা বোনেরা।’
চুঁচুড়ার সভা থেকেই ফের এদিন দিল্লির মসনদ দখলের হুঙ্কার ছাড়েন মমতা। নিজেকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ব্যাখ্যা করে মমতার দাবি, ‘আগামী দিন খেলার মাঠে খেলতে হবে। বিজেপিকে মাঠ খালি করতে হবে। জোড়াফুলে ভোট দিতে হবে। দাঙ্গা করে পদ্মফুলটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। ওরা দাঙ্গা করলে আমাদের পাঙ্গা নিতে হবে। ইলেকশনের আগে আমার পা টা চোট করে দিল। যাতে আমি বেরোতে না পারি। তাতে কী, মা-বোনেদের দুটো পা দিয়ে আমি যা করার করব। আমি ওই একটা পায়ে যা করে বেড়াচ্ছি না, একটা পায়েই বাংলা জয় করবে, আর দুটো পায়ে তো আগামীদিনে দিল্লি জয়ও করতে হবে।’
ভারতে নির্বাচন চলাকালে বুথফেরত জরিপ নিষিদ্ধ। তবে নির্বাচন শুরুর আগ পর্যন্ত করা বিভিন্ন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আসন কমলেও পশ্চিমবঙ্গে আবারও ক্ষমতায় আসছে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস।
গত শুক্রবার উত্তরবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় মমতা ব্যানার্জি বলেন, প্রথম দুই দফায় ৬০ আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। আমরা এর মধ্যে ৫০ আসনেই জিততে চলেছি। তৃণমূল সব মিলিয়ে ২০০ আসনে জিতবে।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্র বলছে, ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অন্তত ১৮০ আসনে জিততে চলেছে তারা।
যদিও বিজেপির দাবি, তারা এবার ২০০ আসনে জিতবে এবং সরকার গড়বে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ