নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার (৩১ মার্চ) নিজের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস ও পরে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন তিনি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। আবদুল কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নম্বর সদস্য থেকে ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। ভবিষ্যতে কোনও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। ভবিষ্যতে আমি কোনও দলীয় পদ-পদবির দায়িত্বও নেবো না।’
বুধবার (৩১ মার্চ) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি এ পোস্ট দেন। পরে লাইভে এসেও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
ফেইসবুকে লাইভে এসে বলেন, ‘আমি সব অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে কথা বলে এখন সবার কাছে খারাপ হয়ে গেছি। যে দলে সম্মান নেই সেখানে আমি থাকবো না। আমি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য হয়েছি সেখানে থেকেই কাজ করবো।’
বিদায়বেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি একসাথে না পারলেও ধীরে ধীরে দলের দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরুন। যারা বেশি অনিয়মকারী তাদের দল থেকে বের করে দিন।
কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, কিন্তু আপনার প্রশাসন মাদককে সহযোগিতা করছে। এখনই ঘোষণা দিন যে, সংসদ সদস্যসহ যে কোনো প্রতিনিধি বা পদে আসতে মাদক ও নারীর সাথে থাকতে পারবে না। ডোব টেস্ট করে চাকরিতে যোগদান করান।’
ঢাকায় সব দল একদল হয়ে গেছে দাবি করে কাদের মির্জা বলেন, ‘দিনের বেলা আলাদা রাজনীতি করলেও রাতের বেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি মিলে হোটেলে একসাথ হয়ে যায়। এরা ‘জাতীয় অপকর্ম পার্টি’ গঠন করেছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের মির্জা।
ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি পদপদবির জন্য অপশক্তিদের কাছে মাথা নত করেছেন। যেদিন আমার ছোট ভাই (দেলোয়ার) ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে সেদিনই তার সাথে (ওবায়দুল কাদের) সম্পর্ক মানসিকভাবে দূরে সরে গেছে।’
গত ১৬ জানুয়ারি বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি আরও তিনবার মেয়র ছিলেন।
নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে সারাদেশে আলোচনার জন্ম দেন কাদের মির্জা।
এরপর কাদের মির্জার সঙ্গে তার দলীয় বিরোধী পক্ষের সংঘর্ষে সংবাদিকসহ দুইজন নিহত হয়। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে আদালতে।
পদত্যাগের বিষয়ে কাদের মির্জা সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে ছয়বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অপমান সহ্য করতে না পেরে আমি দল থেকে পতদ্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর প্রশাসনিক হয়রানি ও নিপীড়নের প্রতিবাদে, ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে নানাভাবে আমার নির্যাতনের শিকার হওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছি।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, তিনি দলের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে থাকবেন না। তবে তার কর্মী-অনুসারীরা দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে তিনি দূর থেকে তাদের সমর্থন করবেন।
তবে তিনি এখনও লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেননি বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম।
তিনি বলেন, “কাদের মির্জা দল থেকে পদত্যাগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিত বা মৌখিক কোনোভাবেই জানাননি। ফেইসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ