নোয়াখালীর একটি স্কুলে ছাত্রীদের বোরকা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এমন একটি অভিযোগ তুলে ওই এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে।
সূত্র মতে, সেনবাগ উপজেলার একটি মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ চলতি মাসের গোড়ার দিকে ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষের ভেতরে এসে বোরকায় মুখমণ্ডল ঢেকে না রাখার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দিয়েছিল।
কিন্তু পরে সেই নোটিশটি কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহারও করে নেয়। কিন্তু তার দুই সপ্তাহ পর এসে দেখা যাচ্ছে এ নিয়ে বিক্ষোভ করছে কিছু মানুষ।
‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে প্রতিবাদ
প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন নোটিশটি নিয়ে বহিরাগতরা ‘ভিন্ন ব্যাখ্যা’ দেয়ায় ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হওয়ায় তারা সেটি প্রত্যাহার করে নেন।
গত সাতই মার্চ দেয়া নোটিশে শ্রেণীকক্ষের ভেতরে মুখমণ্ডল ঢাকা থাকে এমন বোরকা না পরার কথা বলা হলেও স্কুলের শিক্ষার্থী ও কথিত ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল ব্যক্তি ‘স্কুলে বোরকা নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে এমন দাবি তুলে সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
গতকাল সোমবার থেকে ঘণ্টাব্যাপী নোয়াখালী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুদ ও সেনবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
এর আগে সকাল ১০টায় বিক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিদ্যালয় আঙিনায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারাধন চন্দ্র দাস হামলা করেছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ১২মার্চ সকালে বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে বিদ্যালয়ে ঢুকার সময় ছাত্রীদের বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়।
পরবর্তীতে অভিভাবক ও স্থানীয়দের চাপে পড়ে পরদিন এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও শ্রেণীকক্ষে সহকারী শিক্ষকরা বোরকা পরা ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে এবং বোরকা ছাড়া শ্রেণীকক্ষে আসার জন্য চাপ দেয়।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
সেনবাগ থানার ওসি মোঃ ইকবাল হোসেন পাটোয়ারি বলেছেন যে, স্কুলটিতে মেয়েদের ক্লাসে ছেলেদের বোরকা পরে ঢুকে পড়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিলো।
মেয়েদের নিরাপত্তার জন্যই স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাশরুমের ভেতরে আসার পর বোরকা না পরা বা মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখতে বলেছিলো। পরে সেই নোটিশ প্রত্যাহারও করা হয়েছে। বোরকা পরা যাবে না বা বোরকা নিষিদ্ধ-এমন কোন কিছুই সেখানে বলা হয়নি।
তিনি বলেন একদিকে অনেক সময় মেয়েদের বোরকা পরে ছেলেদের আসার ঘটনা ঘটছিলো আবার প্রকৃত শিক্ষার্থী স্কুলে না এসে অন্য কেউ চলে আসে- এমন ঘটনাও ঘটেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলছেন, স্কুলের পাশেই একটি মার্কেটে কিশোর গ্যাং আড্ডা দিতো যা মার্কেট কর্তৃপক্ষ এখন বন্ধ করেছে। তারা এখন স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়ছিলো।
তিনি বলেন, স্কুলের ভেতর থেকে বোঝার উপায় ছিলো না যে কারা আসছে স্কুলে। সেজন্য ক্লাসের ভেতের মুখমণ্ডল যাতে দেখা যায় অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের যেন চেনা যায় সেজন্যই ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বহিরাগত একটি চক্র সেটিকেই ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।
বর্তমান পরিস্থিতি কি?
ঘটনাটিকে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে দাবি করে যারা মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে তারা এরপর আর কোন কর্মসূচি অবশ্য দেয়নি।
তবে স্থানীয়রা কয়েকজন জানিয়েছেন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বুধবার হওয়ার কথা এবং মূলত এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নানা ধরণের ঘটনা ঘটছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন স্কুল থেকে দেয়া এ সম্পর্কিত নোটিশসহ এ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিস্তারিত কারণ তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার দিক থেকে কোন ত্রুটি পেলে সেটি কর্তৃপক্ষ দেখতে পারে। তবে যা প্রচারের চেষ্টা হয়েছে তেমন কিছু ঘটেনি।
পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষ আজ জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে আর কোন ঘটনা ঘটেনি এবং যারা মানববন্ধনের আয়োজন করেছিলো তাদের দিক থেকেও আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ