একদল সন্ত্রাসী স্থানীয় এক দোকানির সঙ্গে বাজে আচরণ করেছিলেন। তা দেখে প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যান মাওলানা আবু জাহের, তখন কোলে তার শিশুকন্যা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।
প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, এরপর সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। পরে আবু জাহের ও তার শিশুকন্যা জান্নাত লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জান্নাত।
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪ নম্বর হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মালেকার বাপের দোকান এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের (৪০) ও তার কোলে থাকা শিশু তাসফিয়া আক্তার প্রকাশ জান্নাতকে গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা।
তিন বছর বয়সী জান্নাতের মৃত্যুর ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মামুনের দোকানে গিয়ে তাসফিয়ার জন্য একটি চিপস ও জুস কিনে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন সন্ত্রাসীর সামনে পড়ি। এসময় তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই ওইদিন বৈঠকে ছিলি। তোর কারণে এত সব ঘটনা। এ কথা বলেই আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে।
প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। এরপর মামুন আমাকে আর মেয়েকে বাড়িতে এগিয়ে দিতে আসে। তখন সন্ত্রাসীরা আবার গুলি ছুঁড়লে আমি ও তাসফিয়া (জান্নাত) লুটিয়ে পড়ি। আমার মেয়ের চোখ,মুখ থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছিল।
বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও রিমন বাহিনীর প্রধান রিমনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।
বাংলাদেশের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের হাজীপুর ইউনিয়নে ঘটা এই ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ দিলেন এলাকাবাসী।
তারা বলছেন এলাকার চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা শিশুটির বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে শিশুটির দিকে ইট ছুঁড়ে মারে এবং শিশুটির বাবা প্রতিবাদ করলে শিশুটিকে টার্গেট করে গুলি করে।
সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর উপস্থিত কয়েকজনের সাথে হামলাকারীদের বাদানুবাদ হয় এবং এর মধ্যে শিশু ও তার বাবাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, পেছন থেকে আবার এসে সন্ত্রাসীরা শিশুটির বুক ও মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। একই সাথে তারা শিশুর বাবাকেও গুলি করে। গুলিতে শিশুটির মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে শিশুটির মৃতদেহ নিয়ে আজ দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহ আজিম বলছেন বুধবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এ ভয়াবহ ও বীভৎস ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত, কিন্তু কখনো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
তিনি বলেন শিশুটির বাবার সাথে সন্ত্রাসীদের কোন বিষয় ছিলো না। তারা একজনের দোকানে গিয়ে ঝামেলা করছিলো। সেই দোকানেই বাচ্চাটি বাবার পাশে দাঁড়ানো ছিলো। শিশুর বাবা সন্ত্রাসীদের আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন।
তিনি বলেন, এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বাচ্চাটিকে ইট মেরে আহত করা হয়। এরপর তো বাচ্চাটাকে খুনই করে ফেলা হলো। এখানে সবাই জানে কারা করেছে। এদের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু কারও কোন মাথাব্যথা নেই।
যদিও বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি বলছেন তারা তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এবং এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
স্থানীয় আরেকজন জানিয়েছেন শিশুর বাবা যে বাড়িতে বসবাস করছিলেন সেখানকার এক ব্যক্তির সাথে জমির মাটি কাটা নিয়ে আরেক ব্যক্তির বিরোধ চলছিলো।
সে বিরোধের জের ধরে আগেও হামলা করেছিলো একই সন্ত্রাসীরা। পরে এ নিয়ে সালিশও হয়। সে সালিশে শিশুটির বাবাও উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, শিশুটিকে গুলি করার সময় সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে বলেছে যে, তুই তো সেদিন ছিলি।
ওদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাইজদি হাসপাতালে গুলিতে নিহত শিশুটির মৃতদেহের ময়না তদন্ত চলছিলো। চেয়ারম্যান শাহ আজিম জানিয়েছেন ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ এনে দাফন করা হবে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুটির বাবাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ