কদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় এক বন্দুকধারীর হামলায় আটজন নিহত হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের এক সুপারমার্কেটে এক ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২২ মার্চ) বিকেলে দেশটির কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বৌলডার শহরের একটি সুপারমার্কেটে এই ঘটনা ঘটে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন, এএফপি এই হামলা ও নিহতের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে এক বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ‘বন্দুকধারীও’ আহত হয়েছেন। তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
গোলাগুলির ঘটনা লাইভ স্ট্রিমে দেখিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরবর্তীতে তা ইউটিউবেও প্রচার হয়েছে। কী কারণে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এছাড়া সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর বিষয়েও তেমন কিছু জানা যায়নি। পুলিশ বলছে এই ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। অনেক দূর থেকেও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুপুর আড়াইটার দিকে গ্রোসারি স্টোরে এক ব্যক্তি প্রবেশ করেন। এরপরই গুলি শুরু হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে স্থানীয় পুলিশ টুইট করে জানায়, স্টোরটিতে বন্দুকধারী রয়েছেন। তিনি গুলি ছুঁড়ছেন। পরে এলাকাটি এড়িয়ে চলার জন্য লোকজনকে সতর্ক করা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি জানি না এখানে কি হচ্ছিল। আমি গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। এক বন্দুকধারী লোকজনের ওপর গুলি চালাচ্ছিল।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী গোলাগুলির ঘটনা ভিডিও করেছেন। সেখানে দেখা গেছে সুপারমার্কেটের ভেতরে এবং বাইরে মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থল থেকে এক সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে কিং সোপার্স সুপারমার্কেট নামে ওই স্টোরে অভিযুক্ত বন্দুকধারীর গুলিতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্য এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এআর-১৫ স্টাইলের রাইফেল ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, কলোরাডোর দক্ষিণ বৌলডারে অবস্থিত ওই গ্রোসারি সুপারমার্কেটে হঠাৎ এক ব্যক্তি আসেন। ভেতরে ঢোকার পরই কোনো কথা না বলে রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করেন তিনি। এতেই নিহতের ওই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি ফোন পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ফেলে। এক ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টার পর বন্দুকধারীকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তার আগে বন্দুকধারীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় গুলিবিনিময় হয় বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
গতকাল মধ্যরাতের কিছু আগে নগরীর পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই হামলার উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
গুলির ঘটনাটি দ্রুত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অবহিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়, অঙ্গরাজ্য ও নগর কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।
কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জারেড পোলিস ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য তিনি শোক প্রকাশ করেছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন।
গভর্নর বলেছেন, তদন্তের পর বিস্তারিত তথ্য জনগণকে জানানো হবে।
কলোরাডোয় গতকালের ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে জর্জিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আট ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে পৃথক তিনটি স্পা সেন্টারে বন্দুক হামলায় ছয় এশীয় নারীসহ আটজন নিহত হন। এই দুই হামলার মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই বলে এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এমন অভ্যন্তরীণ হামলা হতে পারে বলে কয়েক মাস ধরেই সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা।
সাম্প্রতিক সময়ে গোলাগুলিতে ব্যাপক হত্যা যেন আমেরিকার রুটিনে পরিণত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে সবাই সেটা মেনেও নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পরিসংখ্যান মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা বিশ্বে যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এ কথা ঠিক ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেও বন্দুক হামলা ছিল এবং তিনি চলে যাওয়ার পরও পরিস্থিতি একই আছে। এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, কোন রাজনৈতিক আদর্শ মানুষকে সহিংস করে তুলছে নাকি সহিংস ইচ্ছাকে সে কোন রাজনৈতিক আদর্শের ছায়ায় বৈধ করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দুক হামলার উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা কঠিন এবং কঠোর নীতি প্রণয়ন করাও কঠিন। কিন্তু বন্দুক হামলার সুযোগ বন্ধ করা তেমন কঠিন নয়। শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার সারা দুনিয়াতেই আছে এবং আছে তাদের সহিংস ইচ্ছার বাহার। কিন্তু একজন সহিংস মানুষের হাতে রান্না করার ছুরি বা বেসবল খেলার ব্যাট হাতে যতটা না ভয়ংকর তারচেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে। কারণ চোখের পলকেই সে ১০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে সক্ষম। আর এ পদ্ধতিটি সন্দেহাতীত ভাবে লোভনীয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৩৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ