জরুরি নাগরিক সেবায় চালু করা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন সাহায্য প্রার্থী আসাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। শনিবার (১৩মার্চ) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি।
অভিযোগকারী ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদাহ এলাকার ফয়জুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্করের ছেলে আসাদুল হক। পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে আসাদুল হক উল্লেখ করেছেন, গত ১২ মার্চ সকাল ৯টার দিকে জুনিয়াদাহ এলাকায় আমার বাড়ির পাশে নদীতে হঠাৎ করে পিস্তল থেকে তিন রাউন্ড গুলির ফায়ার হয়। গুলির শব্দ শুনে আমি সাহায্যের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করি।
এরপর সেখান থেকে আমার সঙ্গে ভেড়ামারা থানার ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়। সন্ত্রাসীরা ৪টি পিস্তল, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি করছিল, সেটি ছিল ভেড়ামারা থানার কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের আওতায়।
ভেড়ামারা থানার ডিউটি অফিসার আমার নাম ও মোবাইল নম্বরটি তৎক্ষণাৎ কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জাহাঙ্গীরকে দেন। আমার নম্বরে কল দেয়ার আগেই কোনোভাবে ওই পুলিশ অফিসার সন্ত্রাসীদের সতর্ক করে দেন এবং আমার নাম-পরিচয় তাদের কাছে বলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে বলেন।
পরে আমার নম্বরে দারোগা জাহাঙ্গীর কল দিয়ে হুমকির সুরে বলেন- তুই ফাজলামি করিস, আমি খবর নিয়ে দেখেছি এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
এরপর সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলের পাশে আমাকে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপাতে থাকে। আশপাশের কৃষকরা ছুটে এসে লাঠি দিয়ে তাদের মারধর শুরু করলে তারা পালিয়ে যায়। আমাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। হামলার সময় আলমগীর, মামুন, মিলন, শাকিল, রুবেল, আসমান, রাবিকসহ অন্যরা ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। তাদের বাড়ি ভেড়ামারার বাহাদুরপুরসহ পাশের উপজেলা দৌলতপুরে।
এদিকে আসাদুল শনিবার থানায় অভিযোগ দিতে গেলে আসামিরা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় অভিযোগ নিতে গড়িমসি শুরু করে পুলিশ। তারা মামলা না করে আপস করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুচিয়ামোড়া ক্যাম্পের এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে নিউজ করার দরকার নাই। যারা এসব করেছে, তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার লোকজন। স্থানীয় এক সাংবাদিক সব জানেন, আপনি তার সঙ্গে কথা বলে নিয়েন।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থলে দুটি পক্ষ আছে যারা বালুঘাটে থাকে। কে নদীতে (পদ্মা) নামবে না-নামবে সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়। ৯৯৯-এ ফোন কখন কোন স্টেজে দিয়েছে সেটা জানি না। কারণ আমি ঢাকাতে ছিলাম। শুক্রবার দিবাগত রাতে ভেড়ামারায় ফিরেছি। অভিযোগ দিয়ে থাকলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু মারধর করেছে, কোনো মার্সি (ক্ষমা) হবে না।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ভূমিকায় মানুষের নিশ্চিন্ত থাকার কথা থাকলেও এখন আতঙ্কে ভোগেন। দেশে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক ও ডাকাতির ভূমিকায় নেমে পড়া পুলিশ বাহিনী নিয়ে দেশে এক রকম আতঙ্ক চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি পুলিশের সরাসরি ডাকাতিতে নেমে পড়ায় উদ্বিগ্ন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৩
আপনার মতামত জানানঃ