
ছবি: সংগৃহীত
ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের বড় বাবু মনিরুজ্জামান মনি। অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এই বড় বাবু মনির বিরুদ্ধে। ভূমি অফিসের চৌকাঠ পেরুলেই প্রধান অফিস সহকারী মনি নিজের করা আইন মানতে হয় ভূমিসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে। আর এ কারণেই ভূমি সংক্রান্ত বিরোধও বেড়েছে বহুগুণ। বিরোধে জড়িয়ে বা এ ধরনের ঝামেলা এড়াতে উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি, মিসকেসসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ভূমি অফিসে আসা অধিকাংশ ভুক্তভোগীই জানান, হয়রানি আর ভোগান্তি কী- তা এখানে না এলে বোঝা যায় না। অফিসের প্রত্যেক ধাপে ঘুষ দিয়েই ফাইল এসিল্যান্ডের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। মনিরুজ্জামান মনির এ সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে থাকেন তার পছন্দের নিয়োগপ্রাপ্ত অপু ও হালিম নামের দুই ব্যক্তিসহ দালাল সিন্ডিকেট চক্র।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসে প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই মনিরুজ্জামান মনি নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সদর উপজেলা বহুলী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী গ্রামের মৃত ওমেদ আলীর ছেলে মো. মকবুল হোসেন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসে ২৫১১/২০১৩/২০১৪নং খারিজের বিরুদ্ধে একটি মিসকেস করেন। (যার মিসকেস নং ১১২নং)। সেই মিসকেসের রায় সম্পন্ন করতে বাদী মকবুলের নিকট থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নেন।
পরবর্তীতে তিনি বিবাদী পক্ষের নিকট থেকে বাদী পক্ষের চেয়েও আরও বেশি ঘুষ নিয়ে সেই মামলাটি তারিখের পর তারিখ ফেলছেন এবং আদালতের অজুহাত ও এসিল্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে বাদীপক্ষের নিকট থেকে পুনরায় আবারও ঘুষ দাবি করছেন। এরকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে প্রধান অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে।
এভাবেই খারিজ বাতিলের মিসকেসের রায় পক্ষে দেয়ার কথা বলে বাদী ও বিবাদী পক্ষের নিকট থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঘুষের চুক্তি সম্পাদন করেন। সম্পাদিত ওই চুক্তির অনুযায়ী ঘুষের টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে মনিরুজ্জামান মনি সরাসরি আবার অনেক ক্ষেত্রে তার পছন্দের ওই দুই ব্যক্তিকে দিয়ে লেনদেন ও চুক্তি করিয়ে থাকেন। এছাড়াও অর্পিত সম্পত্তি খ-গেজেটভুক্ত সম্পত্তি অবমুক্তির মিসকেসের রায় পক্ষে দেয়ার নাম করেও লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছেন তিনি।
খারিজ বাতিলের মিসকেস ও অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তির রায় পক্ষে দেয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই চলছে ঘুষের কারবার। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসে ঘুষ লেনদেন কার্যক্রম। কোন কিছুকেই তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা ভুক্তভোগীদের কাছে অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুষের অংক নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন প্রধান অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান মনি। তার দাবিকৃত ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। এক কথায় মনিকে ঘুষ না দিলে কোনও কাজই হচ্ছে না এই অফিসে। এতে সর্বশান্তে পরিণত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, অবৈধভাবে অর্জিত ঘুষের টাকা দিয়ে মনিরুজ্জামান মনি সিরাজগঞ্জ শহরের জানপুর ব্যাংকপাড়ায় ক্রয় করেছেন সাড়ে ৯ শতাংশ জায়গা। সেখানে চারিদিকে প্রাচীর বেষ্টিত চার দেয়ালের মাঝে এক সময় ছিলো টিনসেট বাড়ি আর এখন সেখানে তিনি গড়ে তুলছেন প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল আলিশান বাড়ী। নামে বে-নামে ক্রয় করেছেন জায়গা-জমি ও বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক, জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ সিরাজগঞ্জের সচেতন মহল।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা, অভিযুক্ত উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী মনিরুজ্জামান মনিকে ফোন দেয়। তিনি বলেন, সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রহমত উল্যাহর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চৌ: মো: গোলাম রাব্বী জানান, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে এমন কর্মকাণ্ড সদর উপজেলা ভূমি অফিসে সংঘটিত হয়ে থাকলে আমি অভিযুক্তর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রায় সকল ভূমি অফিসেই জনগণকে হয়রানির শিকার হয়ে কর্মরত কর্মচারীদের ঘুষ দিতে হয়। কাগজপত্র সঠিক হলেও যেমন ঘুষ দিতে হয়, তেমনি কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলেও দিতে হয় ঘুষ। এমন জঘন্য ও বিশ্রী দশার কবলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারিভাবে এমন অবস্থার প্রশমনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪০
31 - 31Shares
আপনার মতামত জানানঃ