টানা দুইবার জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসীন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভারতে অধুনা জনপ্রিয়তা পাওয়া বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে হানা দিলে এবারের নির্বাচনে মমতাকে বেগ পেতে হবে বলে ধারণা করা হলেও রাজ্যটিতে জনমত জরিপে মমতাই এগিয়ে আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে জনসমীক্ষা সংস্থার (সিএনএক্স) সর্বশেষ রিপোর্ট জানিয়েছে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ৪৩ শতাংশ ভোটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর ২৪ শতাংশ ভোটার জানান তারা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে চান।
৯৩৬০ জন ভোটারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন সমীক্ষকরা। দ্বিতীয় দফায় সিএনএক্স সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখনও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মানুষের পছন্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখতে চান।
এই দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাইছেন রাজ্যের ২৪ শতাংশ মানুষ। বাকিরা অবশ্য লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান পাঁচ শতাংশ মানুষ।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে এবার তার সামনে হাইভোল্টেজ লড়াই। শুভেন্দুর প্রতিপক্ষ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ৮ শতাংশ মানুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শুভেন্দুকে চান। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে ৪ শতাংশ মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর আসনে দেখতে চান।
গতকাল সোমবার সর্বশেষ প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৬৪টি আসন। বিজেপি পেতে পারে ১০২ থেকে ১১২ আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ২২ থেকে ৩০টি আসন। আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিএনএক্সের ওই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১১৭টি আসনের ৯ হাজার ৩৬০ জন ভোটারের মধ্যে ১৫ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টের চেয়ে এবার তৃণমূলের আসন বাড়া এবং বিজেপির আসন কমার ইঙ্গিত মিলেছে। তবে সমীক্ষায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভার প্রতিক্রিয়া ও রাজ্যব্যাপী তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টি আনা হয়নি।
এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তৃণমূল পেতে পারে ১৪৬ থেকে ১৫৬ আসন। বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ১১৩ থেকে ১২১টি আসন।
আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ২০ থেকে ২৮টি আসন। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর ৮ মার্চের সমীক্ষা রিপোর্টে তৃণমূলের আসন বাড়া এবং বিজেপির আসন কমার ইঙ্গিত মিললেও ১৫ ফেব্রুয়ারির পর এই ৮ মার্চের সমীক্ষা রিপোর্টে বাম ও কংগ্রেস জোটের আসন বাড়ারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হয়েছিল ২০ থেকে ২৮টি আসন পেতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট। আর গতকাল ৮ মার্চ দেওয়া হয়েছে ২২ থেকে ৩০টি আসন পেতে পারে তারা।
সমীক্ষা রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এবার তৃণমূল ভোট পেতে পারে ৪২ শতাংশ, বিজেপি পেতে পারে ৩৪ শতাংশ আর বাম কংগ্রেস জোট পেতে পারে ২০ শতাংশ।
তবে এই হিসাবে বাম-কংগ্রেস জোটে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর গড়া ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাম-কংগ্রেস জোটে আইএসএফ যুক্ত হওয়ায় এই জোটের আসন আরও বাড়তে পারে।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২১১টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ৭৭টি আসন। বাম-কংগ্রেস প্রধান বিরোধী শক্তি হয়েছিল। সম্ভাবনা তৈরি করেও ক্ষমতার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি বাম-কংগ্রেস। বিপুল আসনে জিতে সেবারও ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০০১-এ তৃণমূল যেমন হারাতে পারেনি সিপিএমকে, বিজেপিও হারাতে পারবে না তৃণমূলকে। সেবার তৃণমূল আওয়াজ তুলেছিলেন ‘এবার নয় নেভার’। সেবার কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। আরও ১০ বছর বহাল তবিয়তে রাজত্ব করেছে বামেরা।
২০২১-এ সেই পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেবারও (২০০১) সিপিএম বিরোধী হাওয়া উঠেছিল। তৃণমূল বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাম জমানার অবসান ঘটাতে। কিন্তু সফল হয়নি তৃণমূল-কংগ্রেসের জোট। ফের বিপুল ক্ষমতা নিয়ে ফিরেছিল সিপিএম সরকার।
তারপর ২০১১ সালে ফের কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল কংগ্রেস বাম জমানার ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পরিবর্তনের সরকার গড়েছিল। তারপর কেটে গিয়েছে ১০ বছর।
মাঝে ২০১৬ সালেও বাম-কংগ্রেস জোটকে উড়িয়ে তৃণমূল বিপুল ক্ষমতা লাভ করেছিল। এবার ২০২১-এ তাদের নয়া প্রতিপক্ষ বিজেপি।
বিজেপি ২০১৯-এর লোকসভায় ১৮ আসনে জিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। লোকসভায় তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। তাই ২০২১-কে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তারা।
বিজেপি হাওয়া তুলেছে এবার তৃণমূলকে হারিয়ে প্রকৃত পরিবর্তন আনার। তৃণমূলকে ভেঙে ক্ষমতা খর্ব করেই তারা পসার লাভ করতে চাইছে। কিন্তু বিজেপির পক্ষে এভাবে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিজেপি সেয়ানে সেয়ানে লড়ার মতো জায়গায় এলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এবার বিজেপির অবস্থা ২০০১-এর তৃণমূলের মতো হবে। তৃণমূল যেমন সেবার হাওয়া তুলেও সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেনি, এবার বিজেপিও পারবে না তৃণমূলকে হারাতে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৩
আপনার মতামত জানানঃ