ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম না মানায় অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হওয়ার আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আড়াই লাখ ভ্যাকসিনের একটি চালান আটকে দিয়েছে ইতালি সরকার। দেশটিতে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের এই আড়াই লাখ ডোজ অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। এদিকে সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে আরও চার কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চাইছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ইতালিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা উৎপাদিত এই ভ্যাকসিন আপাতত পাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকেও ইতালি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে বলা হয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চুক্তি ঠিকঠাকভাবে না মানায় ভ্যাকসিনের চালান আটকে দেয়া হয়েছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ভ্যাকসিন বানানো কোনো কোম্পানি যদি জোটের সঙ্গে চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সদস্য রাষ্ট্র সেখান থেকে ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধের সুযোগ পাবে। ইতালি-ই ইইউ জোটের প্রথম দেশ, যারা এ নির্দেশনা কাজে লাগালো।
অস্ট্রেলিয়া বলেছে, একটি চালান হাতছাড়া হওয়ার কারণে তাদের টিকাদান কর্মসূচি খুব একটা ব্যাহত হবে না।
গত সপ্তাহেই ইইউর কাছে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে পাঠানো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার এই চালানটি আটকে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল ইতালি।
এ বিষয়ে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুমোদনের জন্য তারা আবেদন পেয়েছিল। এর আগের আবেদনটি তারা অনুমোদন করেছিল। কারণ তাতে বলা হয়েছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য কিছু স্যাম্পল পাঠানো হবে। কিন্তু সবশেষ আবেদনটি আড়াই লাখ ডোজের বেশ বড় চালান। ফলে আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নেই। ইইউ ও ইতালিতে টিকার ঘাটতি রয়েছে। ইতালি ও ইইউতে সামগ্রিকভাবে যে টিকা সরবরাহ করা হয়েছে তার তুলনায় অস্ট্রেলিয়া রপ্তানির জন্য আবেদন করা এই চালানটি অনেক বড়।
অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, এরই মধ্যে তারা তিন লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইইউ-র সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে যত টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ সরবরাহের পথে রয়েছে। ঘাটতির জন্য উৎপাদনজনিত সমস্যাকেই দায়ী করছে কোম্পানিটি।
জানুয়ারিতে ইতালির তখনকার প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের ভ্যাকসিন সরবরাহে দেরিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কোম্পানি দুটি চুক্তির শর্ত লংঘন করছে বলেও অভিযোগ ছিল তার।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে শ্লথগতির টিকাদান কর্মসূচির জন্য ইইউ’র বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা আছে। গত বছর জুনে হওয়া ইইউ ভ্যাকসিন স্কিম অনুযায়ী ২৭ দেশের এ জোটটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর হয়ে ভ্যাকসিন ক্রয়ে দরদাম করতে পারবে।
অস্ট্রেলিয়ায় আড়াই লাখ ডোজ টিকার রপ্তানি আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইইউ বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
অস্ট্রেলিয়া গত সপ্তাহ থেকে ফাইজার/বায়োএনটেক টিকার মাধ্যমে তাদের কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। শুক্রবার থেকে দেশটিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগও শুরু হওয়ার কথা।
সেরাম থেকে আরও ৪ কোটি টিকা কিনতে চায় বাংলাদেশ
এদিকে ভারতের ‘সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া’র কাছ থেকে আরও চার কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চাইছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার(০৪ মার্চ) স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যসচিব গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, ‘আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী হয়।’ এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারিভাবে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার দুটি চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। দুই দফায় আসা ৭০ লাখ টিকা দেওয়া হচ্ছে দেশব্যাপী। এই টিকার বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সেই সংখ্যা এখনও সিঙ্গেলে ডিজিটে।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গতবছর নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তার মধ্যে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে। তার আগে ভারত সরকার করোনায় চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে যে ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছিল, সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যা তারা বাজারজাত করছে কোভিশিল্ড নামে।
সেরাম থেকে গত ২৫ জানুয়ারি টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। গত এক মাসে অর্ধকোটির বেশি মানুষ এ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশের মত।
নভেম্বরের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিপুল চাহিদার কারণে সেরাম দ্বিতীয় চালানে মাত্র ২০ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ আরও ৪ কোটি টিকা আমদানি করতে চাইছে। এ বিষয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশ নতুন করে টিকা কেনার যে চেষ্টা শুরু করেছে, সে বিষয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের সেরাম থেকে কেনা টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারাই বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা নতুন করে টিকা কেনার বিষয়ে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নতুন করে টিকা কেনার কোনো আদেশ তারা দেননি। এখন পর্যন্ত মোট তিন কোটি ডোজের অর্ডারই তারা দিয়েছে। সরকার চাইলে নতুন আদেশ দেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৬
আপনার মতামত জানানঃ