সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা অব্যাহত রয়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জের কাছে ভারতের ফুরাংপাড়া এলাকায় গুলিতে নিহত সহিজল ওরফে শিক্কু মিয়া (৪০) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতী সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বকশীগঞ্জ সীমান্তের কামালপুর স্থলবন্দর পয়েন্ট দিয়ে লাশটি হস্তান্তর করা হয়। ভারত-বাংলাদেশের ১০৮৮-৮৯ নম্বর সীমানা পিলারের মাঝামাঝি ফুরাংপাড়া এলাকায় লাশটি পড়ে ছিল।
নিহত শিক্কু মিয়া বকশীগঞ্জের কামালপুর ইউনিয়নের লাউচাপড়া গ্রামের ফারাজ উদ্দিনের ছেলে। রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সোমবার সকালে ফুরাংপাড়া এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির এক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে নিহত শিক্কু মিয়া বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত না হওয়ায় তার লাশটি বিএসএফ নিয়ে যায় এবং ময়নাতদন্ত করে।
পরে বিজিবির কাছে ছবি দেখে শিক্কু মিয়ার স্ত্রী মলিদা বেগম লাশটি তার স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। পরে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে (আলোচনা) লাশ ফেরত দিতে রাজি হয় বিএসএফ। লাশ হস্তান্তরের সময় ভারতের পক্ষে ২৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন সহকারী কমান্ডার পি ডলি এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবির সুবেদার আজমত আলী নেতৃত্ব দেন।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সম্রাট জানান, লাশটি প্রথমে অজ্ঞাতনামা ছিল। ভারতে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাশটি আমরা গ্রহণ করেছি। এরপর শিক্কু মিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় কোনও মামলা হয়নি।
সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল দফায় দফায় বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, ২০১৮ সালে যেখানে সীমান্তে হত্যার সংখ্যা ছিল ১১, সেখানে ২ বছরের ব্যবধানে তা চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে। ভারত সরকারের সবুজ সংকেত ছাড়া এভাবে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার কথা নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। ভারত সরকার যেহেতু বাংলাদেশকে কৌশলগত বন্ধু হিসেবে তুলে ধরে, সেক্ষেত্রে সীমান্তে হত্যার নির্দেশ কে দিচ্ছে, কিংবা সেই হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কে ভারত সরকারকে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে এটা খুঁজে বের করতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মইনুল ইসলাম বলেছেন, কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিই সীমান্তে হত্যার সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। গোটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এ প্রশ্নে একমত যে, কেবল ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাংলাদেশের সরকার বাধ্য করতে পারলেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমান্ত হত্যার পেছনেও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সন্দেহ রয়েছে। ভারত ছোট দেশকে সব সময় ছোট করেই রাখতে চায়। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।,বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু কাগজে কলমে। তাই ভারতের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ