গ্রাম বাংলায় স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নামের পাশে একসময় ট্যাগ লাইন জুড়ে দিতো। ‘গমচোর’ টিনচোর’ চালচোর’ ‘কাঠচোর’ ‘মাটিচোর’ ইত্যাদি বিভিন্ন ট্যাগ জুড়ে দিতো ‘চেয়ারম্যান’ শব্দটির পাশে। ফলে আসল নামে চেয়ারম্যান পরিচিত না হলেও স্থানীয় পর্যায়ে গমচোর চেয়ারম্যান, চালচোর চেয়ারম্যান ইত্যাদি নামে পরিচিত হতো। এখন যুগ পাল্টেছে, পৃথিবী পাল্টেছে, পাল্টে যাচ্ছে কতোকিছু। কিন্তু পাল্টাননি চেয়ারম্যানেরা। এখনো তাদেরকে ঐসব নামেই স্থানীয় পর্যায়ে চেনা হয়। কেননা, তারা তাদের কর্মকাণ্ড এখনো আগের মতোই ঐতিহ্য মনে করে ধরে রেখেছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনই চেয়ারম্যানদের নামে বিভিন্ন কুকীর্তির সংবাদ আসে মিডিয়াতে। আজ মঙ্গলবার(১৬ ফেব্রুয়ারি) তেমনি দুটি ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে জোর করে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এতে চেয়ারম্যানসহ এক ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান সঞ্জুর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত ঘরের দরজা-জানালা চুরির অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বারিক বাজারের হেরাজউদ্দিনের ছেলে আসামুদ্দিনের কাছ থেকে জোর করে সম্পত্তি আদায়ের জন্য ব্যাংকের চেকের পাঁচটি পাতা ও কয়েকটি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগে মামলা হয় ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।
আরও জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক তদন্ত করে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করেন। যার প্রেক্ষিতে গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েল ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিয়াউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান সঞ্জুর বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত ঘরের দরজা-জানালা চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ভাটিয়া বাজারে কৃষি বিভাগের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ২০ কেজি লোহার রড, চারটি কাঠের দরজা ও পাঁচটি জানালা চুরি হয়। এ ঘটনায় গত শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মামলা দায়ের করেন কৃষি বিভাগের ভাটিয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন। মামলায় দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সঞ্জু, মো. সেলিম (৪০), রুবেল (৪০), দানু মিয়া (৩৬) ও হবিকে (৩৬) আসামি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আসে। তারা জনপ্রতিনিধি হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি অনুদান চুরি, জোর করে জমি দখলসহ আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। জনগণের পাশে থাকার জন্য নির্বাচিত হলেও তারা আদতে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য নির্বাচনে দাঁড়ান বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা, বরখাস্ত ইত্যাদি চলমান থাকলেও থামানো যাচ্ছে না তাদের। সম্প্রতি এসব যেন বেড়েই চলছে। এবিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের কেবল বরখাস্তই নয়, উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৬
আপনার মতামত জানানঃ