রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কোনো ধরনের গানবাজনা নিষিদ্ধ নয়। গানবাজনা বিষয়ে আইনের কোথাও কোনো বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়নি। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা কর্তৃক বিভিন্ন জায়গায় গানবাজনা নিষিদ্ধ করার খবর আসে মাঝেমধ্যেই। এবার লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উচ্চশব্দে গান-বাজনায় সতর্কতা জারি করেছেন চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান-বাজনা করলেই ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। একইসাথে কোনো অভিভাবক বোরকা ছাড়া মেয়েদের স্কুলে পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চেয়ারম্যানের সতর্কবার্তাগুলো হাফেজ মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নির্দেশনা রূপে ফেসবুকে প্রচার করছেন।
চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, রাতে উচ্চশব্দে গান-বাজনা হলে মানুষ ঘুমাতে পারে না। এজন্য রাতে গান-বাজনা না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ অভিযোগ দিলে জরিমানা করা হবে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমার ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার নিয়ম রয়েছে। আমার ফেসবুক আইডি নেই। কে বা কারা আমার নাম দিয়ে এটি ফেসবুকে চালাচ্ছে। আমি এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, একজন আলেম হিসেবে মা-বোন ও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাছাত্রীদের পর্দার জন্য বোরকা পরে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। স্কুলে মোবাইল নিয়ে গেলে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটবে। এতে স্কুলে যেন শিক্ষার্থীরা মোবাইল নিতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদের সতর্ক করার জন্য ওয়াজ-মাহফিলে কথা বলেছি। আমার কথাগুলো কোনো আইন নয়, সতর্কবার্তা ও পরামর্শ। রাষ্ট্রের আইনের বিরুদ্ধে যেতে পারি না। আমি বলেছি একরকম, লোকজন প্রচার করছে অন্যরকম।
ফেসবুকে প্রচার পাওয়া নির্দেশনার ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তদন্ত চলছে। চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। ফেক আইডি থেকে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।’
কোনো অভিভাবক বোরকা ছাড়া মেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না। যারা পাঠাবেন তাদের তালিকা করব। কী ব্যবস্থা নেই, সেটা পরে দেখবেন
ফেসবুকে হাফেজ মনিরুল ইসলামের (Hafej Monirul Islam) দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি এ রকম: ‘আলহামদুলিল্লাহ, শুরু হল ইসলামী শাসনব্যবস্থা। কাদিরা ইউনিয়নের বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো গান-বাজনা চলবে না। যদি চলে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। বাজারে কোনো গানের আওয়াজ যেন না শুনি। তোমার মন চাইলে এয়ারফোন দিয়ে শোন, আরেকজনকে শুনাইও না। যারা বক্স ভাড়া দাও, মনে রেখ এমন বাজেয়াপ্ত হবে, কোনো দিন ফিরে পাবে না।
‘কোনো অভিভাবক বোরকা ছাড়া মেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না। যারা পাঠাবেন তাদের তালিকা করব। কী ব্যবস্থা নেই, সেটা পরে দেখবেন। স্কুলে কোনো ছাত্র-ছাত্রী মোবাইল নিতে পারবে না। মোবাইল বাড়িতে চালাবে। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ এটা খেয়াল রাখবেন।’
এদিকে কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী বলেন, ‘চরকাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দিতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কিংবা ইউপি সদস্য কারো গানবাজনা শোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করার অধিকার রাখেন না। তারা মনে করেন, স্থানীয় সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। গানবাজনা কোনো মানুষকেই অপরাধপ্রবণ করে তোলে না বরং মানসিকভাবে আরো প্রস্ফুটিত করে তোলে। সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহে ব্যত্যয় ঘটালে প্রাকৃতিকভাবে এর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি হবে। পরিণতিতে আমরা প্রতিবন্ধী এক জাতীতে পরিণত হবো। এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গানবাজনা নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২১
আপনার মতামত জানানঃ