প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম আর দুর্নীতির কোনো অন্ত নেই। প্রায় সবকটা প্রকল্পেই অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানোর এক কৌশলও লক্ষ্য করা গেছে। প্রকল্পের সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে যেকোনো কেনাকাটায় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির ছোঁয়া। এসবের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন সময়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন কর্মকর্তাকে একাধিত প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়ায় কাজে বিলম্ব হয়। এতে দফায় দফায় ব্যয় বাড়ানো হয়। সেটা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি রোধ এবং প্রকল্পের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) থাকতে পারছেন না। আর প্রত্যেক পিডিকে প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করতে হবে। প্রকল্পের বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলেই পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগের এই বাধ্যবাধকতা মানতে হবে।
এ নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তার ১০টি, ১৪টি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি আছেন, তাদের অতিরিক্ত প্রকল্পের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একেকজনকে শুধু একটি করে প্রকল্পের পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে একজন কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ দিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে। সব মন্ত্রণালয় থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার পর একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনাসহ ওই চিঠি সব কটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর থেকেই একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিডিরা মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিতে থাকেন সময় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত সপ্তাহেও বলা হয়েছে, এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল রবিবার জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে এখন কাজ চলছে। কোনো পিডি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব থাকতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তার প্রক্রিয়া জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পিডি প্রকল্প এলাকায় যান না। আবার একজন পিডির পক্ষে একাধিক প্রকল্পে সশরীরে থাকাও সম্ভব নয়। এতে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এজন্য একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পে পিডি রাখা হবে না। প্রয়োজনে পিডি নিয়োগের জন্য একটা পদ্ধতি বের করা হবে।
২২ ফেব্রুয়ারির পর সময় বাড়বে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সময় বাড়ানোর দরকার পড়বে না। কারণ কী পদ্ধতিতে সমাধান হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। এটা নিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে প্রকল্প ও পিডিদের দায়িত্ব পালনকালীন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বারবার সময় বাড়ানো এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেরিতে হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, একজন কর্মকর্তাকে একটির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে অনৈতিক চর্চার সম্পর্ক আছে; এটা রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির কারণও হয়: সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না, বাস্তবায়নের ব্যয় বাড়ে; অভীষ্ট উন্নত ব্যাহত ও বিলম্বিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই একাধিক প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা অতিরিক্ত প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন এবং সেই সব প্রকল্পের প্রতিটির জন্য একজন যোগ্য পরিচালক নিয়োগ করা হবে, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৮
আপনার মতামত জানানঃ