জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে ঘৃহহীনদের উপহার দেয়া ঘর নিচু জমিতে তৈরী করায় সামান্য বর্ষাতে পানি থৈ থৈ করছে চারদিকে। সেখানে বসবাসকারীরা বিদুৎবিহীন অন্ধকার ঘরে সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণের ঘরগুলোর চারপাশে পানি থাকায় শিশুদের ঘরে রেখে বাইরে কাজে যেতেও সাহস পাচ্ছেন না সেখানে বসবাসকারীরা।
আশ্রয়ণের জায়গাটি যমুনার একটি শাখা নদী। যে কারণে এলাকার কোথাও বর্ষার পানি না থাকলেও আশ্রয়ণের এই জায়গাটিতে পানি উঠেছে। স্বাভাবিক বন্যা হলেও সেখানে ঘরের চাল পর্যন্ত পানি হবে এবং তীব্র স্রোত বইবে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
নিচু জায়গায় মাটি ভরাট না করেই সেখানে ঘর নির্মাণে করা হয়েছে। নাম প্রকাশে আনিচ্ছুক আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, তারা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পিআইও অফিসের লোকজন মাটির ভরাটের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানিয়েছেন। এতে আশ্রয়ণ ঘরে বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলো নিজেরাই যার যার ঘরের ভিটিতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ করে বালি ভরাট করেছে।
বাসিন্দারা আরও জানান, আশ্রয়ণটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সরকারি কোনো টিউবওয়েলও নেই। একটি ড্রেজার মালিকের স্থাপন করা টিউবওয়েল থেকে তারা খাবার পানি নিচ্ছেন। কিন্তু আর এক ফুট পানি বাড়লেই সেই টিউবওয়েলটিও তলিয়ে যাবে। বন্যা না হলেও আশ্রয়ণের ঘর জলমগ্ন হওয়ার পর কোনো ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের দেখতে আসেননি। কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে বালিজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, আশ্রয়ণ কমিটির সদস্য হলেও ওই আশ্রয়ণগুলো তৈরির সময় তাকে কিছুই জানানো হয়নি। সেখানে সম্পূর্ণ কাজ করেছেন ইউএনও ও পিআইও আফিসের লোকজন। যে কারণে তিনি এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারেননি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নিচু জায়গা নির্বাচন করার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিজুড়ী ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান জানান, তার আগের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর ওই জায়গাটি সিলেক্ট করেছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের দেয়া বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পলিপাড়া গ্রামে নয়টি ঘর বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে। সেখানেও আশ্রয় পাওয়া পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পলিপাড়া গ্রামে ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র ৯টি পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয় দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৯টি বাড়ি। এসব বাড়ি নিচু জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে স্থানীয়রা আপত্তি তুলেন। এছাড়া ওই প্রকল্পে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহারেরও অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে নিচু জায়গাতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রশাসন। তাই এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসছে গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি।
শাজাহানপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’র আওতায় প্রথম পর্যায়ে আড়িয়া ইউনিয়নে সরকারি খাস জমিতে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধাণে বাড়িগুলো নির্মাণ করা করা হয়েছে।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হজুর আলী জানান, অল্প বৃষ্টিতেই পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, বাথরুম, টিউবওয়েল, যাতায়াতের রাস্তা সব কিছুই পানিতে ভাসছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হুজুর আলী।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা আয়শা বেগম জানিয়েছেন, ‘হামাকেরে ঘরবাড়ি নাই, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামাকেরে ঘর দিছে। ৩ দিন ধইর্যা ঘরের মদ্যে পানি। সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়ের ভয়ে দিন যাচ্ছে।’
এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে আপাতত পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পরবর্তীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যারা জায়গা নির্বাচন করেছেন তাদের দায়িত্ব কী ছিল? এই টাকাগুলো কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর না, আওয়ামী লীগ সরকারের না, জনগণের টাকা। জনগণের টাকা জনগণকে দেয়া হচ্ছে। জনগণের টাকা নয়ছয় হচ্ছে তাহলে কী বলব— দেশে কি কোনো প্রশাসন আছে? বলব, প্রধানমন্ত্রীকে আরো কঠোর হওয়া দরকার। আরো উদ্যোগী হওয়া দরকার।’
তারা আরও বলেন, এটা ষড়যন্ত্র না, কিছু লোক আছে জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, এমপি— যে-ই হউক, এটা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদেরকে ধরে নিতে হবে, তারা দুর্নীতি করছে, মানুষকে ঠকাচ্ছে, মানুষের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২০৪৮
আপনার মতামত জানানঃ