মাহফিলে ওয়াজ না করে ওয়াজিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। যতটা না কোরান হাদিসের আলোকে ওয়াজ করেন তারচেয়ে বেশি করেন ব্যক্তি নিন্দা। একইসাথে লাগামহীনভাবে উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিয়ে থাকেন। এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বক্তাসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামের সিদ্দিকীয়া নূরানী মাদ্রাসার উদ্যোগে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন, ধর্মীয় বক্তা মাওলানা ইউনুস (৩৭), তিনি কবিরহাট উপজেলার সাদুল্ল্যাপুর গ্রামের আমিন উল্যার ছেলে। ইমরান হোসেন রাজু (২২), তিনি বসুরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আবুল বাশারের ছেলে।
ওয়াজ মাহফিলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বক্তাসহ দুজনকে আটকের ঘটনা নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক। তিনি বলেন, বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বুধবার রাতে দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। আটক দুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
কদিন আগে ওয়াজ বা ধর্মীয় সমাবেশে কোরান এবং বিশুদ্ধ হাদিসের রেফারেন্স বাধ্যতামূলক করে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি বলেছেন, ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তা রাষ্ট্রবিরোধী, উস্কানিমূলক এবং নানা ধরনের কাল্পনিক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াজ মাহফিলে উস্তকানিমূলক বা কাল্পনিক বক্তব্য যেন দেয়া না হয়, সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, যাতে কেউ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ না পায়।
এরপর ওয়াজ মাহফিলে যারা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে পুলিশ ভাবছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা না করে নারীদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তৃতা দেন।এব্যাপারে পুলিশ অবগত আছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাহফিলে অনেক বক্তা কাল্পনিক বক্তব্য, গালগল্প এবং রাষ্ট্রদ্রোহ বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকে গানও করেছেন। যা সমাজে বিভ্রন্তি সৃষ্টি করছে। এখন ওয়াজ মাহফিলের বক্তা ও আয়োজকদের পক্ষ থেকে বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউব এবং ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করা হচ্ছে এবং তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। সে কারণে উস্কানিমূলক এবং কাল্পনিক বক্তব্যগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এতে সমাজে বিভ্রান্তি তৈরীসহ বিশৃঙ্খল বাড়ছে বলে জানান। তারা জানান, সরকারের চোখের সামনেই এসব ঘটছে, নারীদের নিয়ে কটুক্তি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনগড়া মন্তব্য, ব্যক্তি নিন্দাসহ আরো অনেক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয় যার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। আদালতে বিষয়টি উত্থাপনের পরেও এর কোনো সমাধান না আসায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। একইসাথে কাদের মির্জার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ