জার্মানি, সুইডেন ও পোল্যান্ডের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তাঁরা রাশিয়ার বিরোধী নেতা ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির পক্ষে ‘অবৈধ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন’।
শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গে লাভরভের সঙ্গে ইউরোপীয় ইয়নিয়নের পররাষ্ট্রনীতি–বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বৈঠক করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ ঘোষণা আসে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল শুক্রবার মস্কোয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করার কয়েক ঘণ্টা পর কূটনীতিকদের বহিষ্কারের এই ঘোষণা এলো। সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তাদের কোনো কূটনীতিকের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এদিকে সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাশিয়ার এমন দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের কূটনীতিক এ ধরনের কোনো বিক্ষোভে অংশ নেননি।
গত ১৭ জানুয়ারি জার্মানির বার্লিন থেকে রাশিয়ার মস্কোয় ফেরেন নাভালনি। তাঁকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
গত বছরের আগস্টে রাশিয়ায় বিষ প্রয়োগের শিকার হয়ে নাভালনি জার্মানির বার্লিনে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন। ৩ ফেব্রুয়ারি নাভালনিকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন মস্কোর একটি আদালত। ২০১৪ সালের জালিয়াতির একটি মামলায় স্থগিত সাজার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে নাভালনিকে এ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাভালনির সাজার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভের ডাক দেন তাঁর সমর্থকেরা। তাঁর সমর্থনে রাশিয়াজুড়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। মস্কোয় চলা বিক্ষোভে সহিংসতা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, নাভালনির সমর্থনে যাঁরা মস্কোর রাজপথে নেমেছেন, তাঁদের বেদম মারধর করছে পুলিশ। অনেক বিক্ষোভকারীকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, শুধু মস্কোতেই সাড়ে ৮০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নাভালনির সাজার রায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইউরোপের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অব ইউরোপ বলেছে, এই রায় সব বিশ্বাসযোগ্যতার বাইরে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাভালনির মুক্তি দাবি করেছেন।
এদিকে নাভালনির বিরুদ্ধে আরও এক মামলায় বিচার শুরু হয়েছে আজ। এবারের মামলাটি করা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এক সেনাসদস্যের মানহানির অভিযোগে। পুতিনের পক্ষে একটি ভিডিওতে হাজির হওয়া একদল লোককে গত জুনে নাভালনি ‘দেশের লজ্জা’ ও ‘বিশ্বাসঘাতক’ মন্তব্য করে টুইট করেন। ওই ভিডিওতে ৯৫ বছর বয়সী সাবেক এক সেনাসদস্যও ছিলেন। ওই মন্তব্যের কারণে নাভালনির বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। সূত্র : ইউরো নিউজ, বিবিসি, ডয়েচে ভেলে
আপনার মতামত জানানঃ