বাংলাদেশ নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে তথ্যগত ত্রুটি আছে মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ‘মিথ্যা ও বানোয়াট ভুল তথ্য ছড়ানোর হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি, বুধবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়ানো দুই বিতর্কিত ভাই তার বডিগার্ড, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোনো বডিগার্ড নেই, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও ছিল না, সব নেতাকর্মীরাই তার বডিগার্ড। এখন এসএসএফ আছে। কেউ পেছনে এসে ছবি তুললেই বডিগার্ড হয়ে যায় না। এটি তাদের মিথ্যা সংবাদ। আল জাজিরার মতো নামকরা গণমাধ্যম এ ধরনের সংবাদ করতে পারে, বিষয়টি অবাক করার। তাদের (আল জাজিরা) উচিত ক্ষমা চাওয়া।
এ কে মোমেন বলেন, আপনারা জানেন যে, আল জাজিরা বাংলাদেশের ভালো জিনিস দেখতে পারে না। আল জাজিরার কাজই হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর দোষ খুঁজে বের করা। সেখানে অনেকে ফান্ডিং করে। ব্রিটিশরা নিয়ন্ত্রণ করে এটি। আমাদের একজন জামাই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। যেটি খুবই দুঃখজনক, যারা সবসময়ই ভালো জিনিসের বিপক্ষে আছেন।
বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আল জাজিরা বলেছে আরো কয়েকটি প্রতিবেদন দেখাবে। তাদের সম্প্রচার বন্ধ করার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ আমরা বন্ধ করে খুব একটা লাভ নেই, পৃথিবী এখন উন্মুক্ত। আমরা আশা করব, আল জাজিরা আরো দায়িত্বশীল হবে। অনেকে ধারণা করছেন, পয়সা দিয়ে আল জাজিরাকে দিয়ে এই প্রতিবেদন করিয়েছে।
আল জাজিরার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না আমরা সরাসরি যোগাযোগ করি নাই। আমরা এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছি।
আল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিবেদনে তথ্যগত ত্রুটি রয়েছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার সময় আপনারা দেখেছেন, শেখ হাসিনার বডিগার্ড কারা ছিল? এই সুরঞ্জিত (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত), এই সাবের হোসেন (সাবের হোসেন চৌধুরী), এই মায়া (মোফাজ্জল হোসেন মায়া) ভাই এরাই ছিলে বডিগার্ড। কোনো রকমের পয়সা দিয়ে বডিগার্ড শেখ হাসিনা কখনও নিতেন না। আর বডিগার্ডের সিস্টেম তো সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু ওরা (আল জাজিরা) বড় করে দিয়ে দিল, দুই ছেলে ওরা বডিগার্ড। প্রতিবেদনে তথ্যগত যে ভুল আছে সেটির বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যেতে পারি।
এদিকে আলজাজিরা নিউজ চ্যানেলে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনা সদর দপ্তর। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো প্রতিবাদপত্রে মঙ্গলবার এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, স্বার্থান্বেষী মহল অশুভ অভিপ্রায়ে এটি প্রচার করেছে। প্রকৃতপক্ষে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনের মন্তব্যকারীরা হলো- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন দোষী ডেভিড বার্গম্যান, মাদকাসক্তির অভিযোগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কার হওয়া প্রাক্তন ক্যাডেট জুলকারনাইন সায়ের খান (প্রতিবেদনে সামি হিসেবে আলোচিত) এবং অখ্যাত নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে স্বার্থান্বেষী এই ব্যক্তিরা অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একত্র হয়েছে।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, এটি স্পষ্ট নয় যে কীভাবে আলজাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল একদল অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারী। ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করছে, যারা আগে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ের ভিডিও ক্লিপ একসঙ্গে করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অসংগত বিষয় একত্র করে নেপথ্য কণ্ঠ দিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৩৩
আপনার মতামত জানানঃ