চীন-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্ক শুধু দুই দেশের সীমিত পরিসরের ব্যাপার নয়—এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। ভারতের জন্য এই সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীনের ভূমিকা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জার্মান সংবাদপত্র Frankfurter Allgemeine Zeitung-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারের বড় একটি অংশ চীন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে এবং দুই দেশ একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
জয়শঙ্কর আরও জানান, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়াই পাকিস্তানকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, “আগের দিন সকালে আমরা পাকিস্তানের প্রধান বিমানঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলিকে কার্যকরভাবে অক্ষম করে দিয়েছিলাম। এর ফলেই পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পথে এসেছে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে—ভারত চীন ও পাকিস্তানের সামরিক ঘনিষ্ঠতাকে কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখছে এবং পরবর্তী ভূরাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা দীর্ঘদিনের। পাকিস্তান চীনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক এবং দেশটি চীনা অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৬১% গ্রহণ করে। JF-17 থান্ডার যুদ্ধবিমান, K-8 প্রশিক্ষণ বিমান, আল-খালিদ ট্যাংক, এবং PL-15E মিসাইল—সবই এই সহযোগিতার আওতায় এসেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান PL-15E মিসাইল ব্যবহার করে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যা এই অস্ত্রের প্রথম বাস্তব প্রয়োগ।
চীন-পাকিস্তান যৌথ সামরিক মহড়া ‘শাহীন’ সিরিজ দুই দেশের বিমান বাহিনীর মধ্যে কৌশলগত সমন্বয় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়েছে।
চীন-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ভারত তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটি একটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধে প্রযুক্তিগত আধিপত্য অর্জনে সহায়তা করবে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার উভয় দেশের মধ্যে একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। ভারত তার UAV ব্যয় তিনগুণ বাড়িয়ে $৪৭০ মিলিয়ন করেছে, এবং পাকিস্তান চীন ও তুরস্কের সঙ্গে স্থানীয় ড্রোন উৎপাদনে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে।
চীন-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্ক শুধু দুই দেশের সীমিত পরিসরের ব্যাপার নয়—এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। ভারতের জন্য এই সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ