গাজা উপত্যকায় দ্রুত ত্রাণ না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে।
এমন ভয়াবহ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার। তিনি বলেন, আমি যতটা পারি, এই ১৪ হাজার শিশুকে বাঁচাতে চাই। খবর বিবিসির।
টম ফ্লেচার বলেন, আমাদের গাজায় এখন মানবিক সহায়তার বন্যা বইয়ে দেওয়া প্রয়োজন। আরও সহায়তা পাঠানো সম্ভব কি না, সেটাই হবে জাতিসংঘের ‘সত্যিকার পরীক্ষা’।
বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সেখানে শক্তিশালী টিম রয়েছে, যদিও অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও যারা আছেন, তারা চিকিৎসাকেন্দ্র ও স্কুলে অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন।
এরই মধ্যে সোমবার (২০ মে) তিন মাস পর প্রথমবারের মতো পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। ট্রাকগুলো শিশুখাদ্যসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী বহন করছে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, ফ্লেচার বলেন, প্রায় ২০ লাখ ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মানুষের বিপরীতে এই পাঁচটি ট্রাক একেবারেই অপ্রতুল—এটা যেন বিশাল জলাশয়ে একটি বিন্দু মাত্র।
তিনি জানান, মার্চে ইসরায়েল যখন সাময়িক যুদ্ধবিরতি দিয়েছিল, তখন প্রতিদিন গাজায় গড়ে ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করত। তুলনায় এখনকার সহায়তা একেবারেই নগণ্য। মঙ্গলবার আরও চারটি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। তবে স্থলপথের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির ও বিশৃঙ্খল হওয়ায় এসব সামগ্রী লুট বা চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২ মার্চ ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অজুহাতে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এরপর টানা তিন মাস চলা অবরোধে ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে খাদ্য, ওষুধসহ সব জরুরি উপকরণ। অবরুদ্ধ গাজাবাসীরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ে যে তারা ইসরায়েলের বোমার চেয়ে ক্ষুধাকে বেশি ভয় পেতে শুরু করে। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা যৌথ বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের এই সীমিত সহায়তাকে ‘একেবারেই অপ্রতুল’ বলে অভিহিত করেছে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। একইসঙ্গে, গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধে ইসরায়েলকে আহ্বান জানায়।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও গাজায় টেকসই যুদ্ধবিরতি ও পূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
রবিবার ইসরায়েল গাজায় তাদের চলমান ১১-সপ্তাহের অবরোধ তুলে ত্রাণ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে।
তারা বলেছে, ওই অবরোধ তারা দিয়েছিলো হামাসের ওপর চাপ তৈরির জন্য। এর মধ্যে ত্রাণের অপব্যবহারের বিষয়টিও দেশটি উল্লেখ করেছে। যদিও টম ফ্লেচার বলছেন যে ইসরায়েল যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথেষ্ট নয়।
“আজ নয়টি ট্রাক কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে,” ফ্লেচার সোমবার সন্ধ্যায় বলছিলেন। “কিন্তু এটি সাগরে এক বিন্দু পানির মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকে আরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে”।
“লুটপাট কমাতে ত্রাণের নিয়মিত প্রবাহ থাকতে হবে। মানবিক কর্মীদের একাধিক রুটে সেখানে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি বাণিজ্যিক পণ্যসামগ্রী যেতে দিতে হবে,” বলছিলেন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ