লাল গ্রহ মঙ্গল নিয়ে আমাদের জানার অনেক আগ্রহ। ইলন মাস্কের মতো অনেক প্রযুক্তিবিদ ২০৩০ সালে মঙ্গলের বুকে মানুষের পদচিহ্ন আঁকার চেষ্টা করছেন। দূর থেকে মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগকে একটি খালি লাল মরুভূমির মতো দেখায়। একটু ভালোভাবে সেই পৃষ্ঠে তাকালে অদ্ভুত সব কাঠামো দেখা যায়। এসব কাঠামো সেখানকার প্রাচীন কোনো সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করেন দ্য কাইডোনিয়া ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত মঙ্গল গ্রহসংক্রান্ত গবেষণা দলের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ জে. হাস।
জর্জ জে. হাস নিজের লেখা নতুন বই ‘দ্য গ্রেট আর্কিটেক্টস অব মার্স’–এ মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের বিভিন্ন কাঠামোর কয়েক ডজন ছবি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর ধারণা, মঙ্গল গ্রহে থাকা পিরামিড থেকে শুরু করে তোতাপাখির মতো দেখতে কাঠামোগুলো কোনো এক সময়ের জাঁকজমকপূর্ণ শহরের। তবে লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী রবিন ক্রেমার বলেন, ‘কখনো কখনো আমরা কল্পনায় এমন মুখ দেখি যা আসলে নেই। মুখের মতো নকশা লক্ষ করলে এমনটা মনে হয়। কোনো গাড়ির সামনের দিক বা পোড়া ব্রেডের টোস্টের দিকে তাকালে মানুষের মুখ দেখতে পারেন। একে ফেস প্যারেডোলিয়া বলা হয়। আমাদের মস্তিষ্ক অন্য কোনো কাঠামোকে মানুষের চেহারা বা মুখের মতো মনে করে ভুল করে। মঙ্গলের অনেক কাঠামো দেখে এমন মনে হয়।’
চাবির মতো কাঠামো
চাবির মতো একটি কাঠামো রয়েছে মঙ্গল গ্রহে। ২০১১ সালে নাসার মার্স রিকনেসান্স অরবিটার (এমআরও) মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহের উচ্চ অঞ্চলে লিবিয়া মন্টসের পৃষ্ঠে এই অদ্ভুত কাঠামোর ছবি ধারণ করে। বড় একটি কাঠামোর মধ্যে দুটি অংশ দেখা যায়। একটি অংশ চাবির কাঠামোর মতো, আরেকটি অংশ গোলাকার গম্বুজ বা চাবির মাথার মতো। দুটি কাঠামোকে দূর থেকে বিশাল বিস্ময়বোধক চিহ্নের মতো দেখায়। মঙ্গল গ্রহের চাবির মতো এই কাঠামো জাপানের কোফুন সমাধির মতো কাঠামোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
টিয়াপাখির মতো কাঠামো
২০০২ সালে গবেষক উইলমার ফাউস্ট মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারের তোলা আর্গাইর বেসিনের একটি ছবির তথ্য প্রকাশ করেন। বড় এই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের অদ্ভুত আকার দেখা যায়। দূর থেকে তা একটি চোখ ও ঠোঁটযুক্ত টিয়া পাখির মতো মনে হয়। স্তূপাকৃতির দেহ, একটি পা ও থাবা আর সঙ্গে পালকযুক্ত প্রসারিত ডানার মতো দেখায়। হাস লিখেছেন, ‘ছবিটি দেখার পর টিয়াপাখির গঠন দেখতে পেয়েছি। এই অদ্ভুত কাঠামো তখন থেকে টিয়াপাখির ভূচিত্র বা প্যারোটোপিয়া নামে পরিচিত হয়েছে। পাথর, নুড়ি, মাটির স্তূপ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার করে এমন নকশা পৃথিবী দেখা যায়। টিয়াপাখির কাঠামো একটি ভাস্কর্য, এটি কোনো একটি শিল্প। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এমন ভূচিত্র দেখা যায়। পেরু, ইসরায়েল, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে এমন কাঠামো দেখা যায়।’
সাগান পিরামিড
বিজ্ঞানীদের দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তি কার্ল সাগানের নামে সাগান পিরামিড মঙ্গল গ্রহে অবস্থিত। তিন–পার্শ্বযুক্ত এই পিরামিড ১৯৭০ দশকে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৯৭২ সালে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও পৃষ্ঠের মানচিত্র তৈরির সময়, নাসার মেরিনার ৯ মহাকাশযান এই ছবি তোলে। মঙ্গলের এলিসিয়াম অঞ্চলে অস্বাভাবিক এই গঠনের ছবি তোলা হয়। গ্রহের দ্বিতীয় বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিসমৃদ্ধ এই অঞ্চল। জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগান মনে করেন, শক্তিশালী বাতাস ও তীব্র বালুর ঝড়ের কারণে এমন বিশাল আকারের পাথর ও মাটির স্তূপ থেকে পিরামিডের আকার ধারণ করেছে। লেখক হাস মনে করেন যে এই পিরামিড বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীর নির্মাণ। পৃথিবীতে তিন-পার্শ্বযুক্ত পিরামিড খুব বিরল।
আটলান্টিস কমপ্লেক্স
মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত আটলান্টিস চ্যাওস অঞ্চলের গঠন বেশ আলাদা। সেখানে খাড়া-পার্শ্বযুক্ত স্তূপীকৃত একটি টিলা দেখা যায়। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি অনুসারে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কোনো কঠিন মালভূমির ধীরে ধীরে ক্ষয়ের ফলে এমন কাঠামো তৈরি হয়েছে। দূর থেকে এটি বিশাল শহরসদৃশ কোনো কমপ্লেক্সের মতো মনে হয়। হাস লিখেছেন, এমন বিন্যাস পৃথিবীর জনবহুল অঞ্চলে দেখা যায়। এই এলাকা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল ও সৌদি আরবের আল-উলায় নির্মিত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিস্ফোরিত তারকার কাঠামো
মঙ্গল গ্রহের পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত বন্ধুর সমতলে একটি মালভূমি দেখা যায়। নেপেন্থেস মেনসে অঞ্চলের ছবি বিশ্লেষণ করে অদ্ভুত আকারের গঠন ধরা পড়ে। পাঁচটি বাহুর তারকার মতো কাঠামো অনেকটা বিশাল তারামাছের মতো প্রসারিত। এই কাঠামো ত্রিকোণাকৃতি দুর্গের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই তারকা আকৃতির দুর্গে হয়তো কোনো ভবন ছিল বলে মনে করেন হাস।
আপনার মতামত জানানঃ