কোভিড-১৯ এর ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের মাধ্যমে মহামারি করোনায় থমকে যাওয়া বিশ্বব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিলো। কিন্তু করোনার নতুন প্রজাতির উদ্ভব এবং সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ আবারো নতুন করে ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনের উহানে প্রথম সংক্রামিত নোভেল করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে কেড়ে নিয়েছে ২০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ, ধস নামিয়ে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করার মাধ্যমে নতুন আশ্বাস জাগালেও উদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরনো নিয়মে ফিরতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পুনরায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা ২৫ জানুয়ারী থেকে বলবৎ হয়েছে এবং এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসকল দেশের সঙ্গে ভ্রমণ চালু করার ঘোষণা দিলেও মহামারী মোকাবেলায় তা পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে এমন দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনার নতুন প্রজাতি যুক্তরাজ্যের জন্য করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২৫ জানুয়ারী যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সীমান্তে বহিরাগতদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি এবং ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা বাড়ানো বা কঠোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর অথবা আগতদের কোয়ারেন্টিনে পর্যবেক্ষণের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় বসার কথা ছিল।
করোনায় সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন প্রজাতির আবির্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো গত সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যুক্তরাজ্য থেকে ভ্রমণের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছিল ইইউ। এক্ষেত্রে শুধু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও যাত্রী ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছিল। তবে রোববার থেকে ইইউর বাইরের অন্যান্য দেশ থেকেও অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না দেশগুলো। সেক্ষেত্রেও ইউরোপে রওনা দেয়ার আগ মুহূর্তে কভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার সনদ থাকতে হবে। ইইউর নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ আরো কঠোর করার পক্ষে মত দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানিসহ জোটটির সদস্যদেশগুলোর প্রতিনিধিরা। কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে আগত যাত্রীদের ইইউভুক্ত দেশে এসে পৌঁছার পর পরীক্ষা করা এবং কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পদক্ষেপ আরো জোরালোভাবে কার্যকর করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন এরই মধ্যে প্রতিবেশী নরওয়েতে যাতায়াতের ওপর তিন সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অসলোয় করোনার ব্রিটিশ স্ট্রেইনের (যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরন) বেশকিছু সংক্রমণ ধরা পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড যথেষ্ট সফলতার সাথে করোনা প্রতিরোধ করতেও পারলেও প্রথমবারের মত সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে। সংক্রমণ এড়াতে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইজরাইল নিজ আকাশ সীমা বহির্বিশ্বের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ভ্রমণের ওপর এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি।
মহামারীর প্রাদুর্ভাবস্থল চীন করোনা মোকাবেলায় এরই মধ্যে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছে। কিন্তু আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছেন না দেশটির স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। হেবেইসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ১১টি এলাকায় সম্প্রতি করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই এলাকাগুলোয় সংক্রমণ রুখতে লকডাউন করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। রাজধানী বেইজিংয়েও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর গত সপ্তাহেই সেখানেও আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে হেবেইয়ের কিছু কিছু এলাকায় সংক্রমণ হার কমে আসায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে চান্দ্র নববর্ষের ছুটিকে সামনে রেখে গত সপ্তাহেই দেশটির অভ্যন্তরে ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা ও ক্ষেত্রবিশেষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।
এসডব্লিউ/কেএফ/২৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ