নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলো। রমজানে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বাড়তি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে মানুষের। এতে ব্যাংকগুলোতে টাকা উত্তোলনের হার বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলো। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। বিশেষ করে এস আলম নামক এক ব্যাংক ডাকাতের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ আরো আটটি ব্যাংক থেকে পানির মতো করে টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটি থেকে ৯০ শতাংশ টাকা সরিয়ে নেয়া হয়। যেমন ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থ বের করে নেয় এস আলম। ব্যাংকটির ২৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের মধ্যে নামে ও বেনামে এস আলম বের করে নিয়েছে ২৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। তেমনিভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নেয় ৪৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। তবে একমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নেয় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নেয় ১২ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ১৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ১২ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ৯৯৫ কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এসব অর্থ নেয়ার পর আর তা ফেরত দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বড় অর্থের জোগানদাতা ব্যাংক খেকো এস আলম দেশের ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে বেনামে বের করে নিয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ২৯ কোটি টাকা। যদিও এ তথ্য প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ অঙ্ক বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ব্যাংক ডাকাত এস আলমের মতো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান একমাত্র আইএফআইসি ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে পতিত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থের আরেক জোগানদাতা এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বের করে নিয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে সামিটসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকগুলো থেকে পানির মতো টাকা বের করে নেয়। কিন্তু স্বৈরাচারের আমলে এসব অর্থ ফেরত দেয়া হতো না। তবে কাগজে-কলমে আদায় দেখানো হতো। নানা কৌশলে এসব ঋণ নিয়মিত দেখানো হতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র বিপ্লবে ৫ আগস্টের পর স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে সব ব্যাংক লুটেরা গাঢাকা দিয়েছে। বিদেশে বসে এস আলম নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। এতেই লুটেরাদের কারণে ঘুনে ধরা ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা বের হয়ে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাদের তারল্য সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে গেছে। তারা এখন নিজেরাই চলতে পারছে। কিন্তু অন্যদের সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, লুটেরাদের কারণে কিছু কিছু ব্যাংক প্রকৃত পক্ষেই গভীর সমস্যায় পড়ে গেছে। তারা গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। তবে কিছু ব্যাংক আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি নাজমুস সাদাত বলেছেন, তার ২০০ শাখা এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে, গ্রাহকের যখন বাড়তি তহবিল উত্তোলনের চাপ থাকে। পবিত্র রমজানে গ্রাহকের বাড়তি প্রয়োজন দেখা দেয়। ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা বেড়ে যায়। আর এ সময়েই ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সঙ্কট বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে।
গ্রাহকের বাড়তি চাপ সামলাতে তাই সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ