লাখ লাখ বছর আগে মহাকাশে এক বিশাল তারার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার বিকিরণ পৌঁছেছে এই পৃথিবীতেও। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই ঘটনার বিকিরণে সম্ভবত বদলে গিয়েছে আফ্রিকার টাঙ্গানিকা হ্রদে থাকা ভাইরাস। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে ওই হ্রদের মাছে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা ক্রুজ’-এর গবেষকরা বলছেন, এ বিস্ফোরণের কারণে উচ্চ মাত্রার মহাজাগতিক বিকিরণের সংস্পর্শে এসেছে এসব ভাইরাস, যা এদের বিবর্তনে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।
আফ্রিকার গভীরতম হ্রদ টাঙ্গানিকা, মিঠা পানির এ হ্রদে ২০ থেকে ৩০ লাখ বছর আগে থাকা নতুন এক ভাইরাস প্রজাতির প্রকোপ বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
তাদের অনুমান, দূরবর্তী কোনো সুপারনোভা থেকে আসা বিকিরণের প্রভাব থাকতে পারে ওই প্রকোপে।
‘আয়রন-৬০’ নামের এক তেজস্ক্রিয় মৌলের সন্ধান পেয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা ক্রুজ’-এর স্নাতক শিক্ষার্থী ক্যাটলিন নোজিরির নেতৃত্বে গবেষণা দলটি। তাদের দাবি, এ মৌলটি ওই সুপারনোভার ফল হতে পারে।
এ মৌলের ভাঙ্গন বিশ্লেষণ করে এটিকে প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে ঘটে যাওয়া ওই সুপারনোভা বিষ্ফোরণের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান গবেষকরা।
“এটা ভাবতে অবাক লাগে যে, মহাকাশের এতো দূরে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের পৃথিবীর প্রাণের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে,” বলেছেন নোজিরি।
গবেষকরা বলছেন, বিস্ফোরণের সময় থেকে সুপারনোভার বিকিরণ পৃথিবীতে এসেছে প্রায় এক লাখ বছর ধরে। কোনো ভাইরাসের বিভিন্ন ডিএনএ স্ট্র্যান্ড ভেঙে ফেলতে পারে এসব রশ্মি, যার ফলে জ্যান্ত প্রাণীর মধ্যেও ঘটতে পারে মিউটেশন।
অন্যান্য গবেষণাতেও দেখা গেছে, ডিএনএ-এর ক্ষতি করতে পারে মহাজাগতিক বিকিরণ, যা প্রাণের বিভিন্ন বিবর্তনীয় পরিবর্তনকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষক দলটি বলছে, ওই সময়ে পৃথিবীতে বিকিরণের উচ্চমাত্রার সঙ্গে এ গবেষণার ওই সময়টি মিলে যায়, যা এর আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছিল।
এ ছাড়াও, টাঙ্গানিকা হ্রদে ভাইরাস নিয়ে করা এক গবেষণাও খতিয়ে দেখেন নোজিরি ও তার সহকর্মীরা, যেখানে উঠে এসেছে, একই সময়ে ভাইরাস প্রজাতির প্রকোপও দেখা গিয়েছিল।
গবেষকরা বলছেন, বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয় যে, সুপারনোভাই সরাসরি এর জন্য দায়ী কি না। তবে সময় মিলে যাওয়ার বিষয়টি একইসঙ্গে রোমাঞ্চকর ও কাকতালীয়।
“আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই যে, এদের মধ্যে সরাসরি কোনও যোগসূত্র আছে কি না। তবে সময় মিলে যাওয়ার বিষয়টি কৌতূহলী,” বলেছেন নোজিরি।
“তবে এটি সম্ভব যে সুপারনোভা থেকে আসা বিকিরণ এসব বিবর্তনীয় পরিবর্তনকে চালাতে সাহায্য করেছে।”
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ