জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাদের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ক্ষমতার গতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি সমর্থনে ঘাটতি আছে। ভয়াবহ চাপ ও ব্যাপক অস্থিরতার মুখে শেখ হাসিনা ৫ই আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান।
২০২৪ সালে বিশ্বে ঘটে যাওয়া নির্বাচন ও তার পরবর্তী বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে এক রিপোর্টে এসব কথা লিখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি পঞ্চম দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। অভিযোগ আছে, এই নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও সহিংসতা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২২৪ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে জয় পান। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে।
তাদের দাবি, নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অনুকূলে নয়। তাদের ভোট বর্জনের ফলে ভোটার উপস্থিতির ওপর বড় রকম প্রভাব ফেলে। বলা হয়, শতকরা মাত্র ৪১.৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার অন্যতম। এতে শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনার জয়ের পর তার শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা সুনির্দিষ্ট নীতিতে জবাব চাইতে থাকেন।
কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে তা দেশ জুড়ে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়। সরকারের রাজনৈতিক নিষ্পেষণ ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লাখো মানুষ র্যালিতে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা সহিংস দমনপীড়ন চালায়। এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কমপক্ষে ১৫০০ মানুষ নিহত হন। অন্য সময়গুলোতে সেনাবাহিনী যেমন পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দেয়, এবার তা হয়নি। তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে চায়নি।
পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। দীর্ঘ সময় তার ক্ষমতার নাটকীয় সমাপ্তি ঘটে এই বিদায়ে। সৃষ্টি হয় দেশে ক্ষমতার শূন্যতা। জোর দাবি ওঠে জবাবদিহিতা ও সংস্কারের। বাংলাদেশের গণতন্ত্র যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা জোর দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে ওই নির্বাচন। একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বৈরতন্ত্রের উত্থানের বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। নেতৃত্বের এই পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশি রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক গতিবিধি প্রভাবিত হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ