বহু বছর আগে নিজের তরুণ বয়সে মঙ্গল গ্রহ দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মতোই ছিল। এটি এমন এক উষ্ণ গ্রহ ছিল, যার মধ্যে বিভিন্ন হ্রদ, নদী এবং বিশাল সমুদ্রের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি মেঘ ও বৃষ্টিপাত’সহ ঘন এক বায়ুমণ্ডলও ছিল গ্রহটিতে।
প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের সিংহভাগই হারিয়ে যায়। আর সেটা কীভাবে ঘটল, সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার ধারণা মেলেনি।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, মঙ্গলের পানি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যেখানে লাল গ্রহটির প্রাচীন বায়ুমণ্ডলের সিংহভাগই সম্ভবত আটকে গেছে এর পৃষ্ঠের নচে।
এ গবেষণার লেখকরা গবেষণাপত্রে এমন এক কাদামাটির খনিজের কথা তুলে ধরেছেন, যা ‘স্মেকটাইট’ নামে পরিচিত। পৃথিবীতে এটি তৈরি হয় টেকটনিক প্লেটের গতিবিধি থেকে।
টেকটনিক প্লেট ওপরের দিকে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা ম্যান্টেল থেকে ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন উপাদান তুলে আনতে পারে, যার মধ্যে এ ধরনের কাদামাটিও উঠে আসে।
স্মেকটাইটের একটি বৈশিষ্ট্য হল, এর মধ্যে অনেক ছোট ছোট ভাঁজ থাকে, যা শত শত কোটি বছর ধরে কার্বন ডাইঅক্সাইড আটকে রাখতে পারে।
এর আগের এক গবেষণায় দলটি পরীক্ষা করে দেখেছিল, কীভাবে স্মেকটাইট আমাদের প্রাথমিক বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পৃথিবীকে একটি গ্রিনহাউজ গ্রহ হয়ে ওঠা থেকে বাঁচিয়েছে। আর এই প্রক্রিয়াটি চলছে এখনও।
তবে, মঙ্গল গ্রহে টেকটনিক গতিবিধির মতো অভিজ্ঞতা না থাকলেও এর সব জায়গায় স্মেকটাইটের অস্তিত্ব রয়েছে। এতে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ঘিরে থাকা রহস্য সমাধানের সম্ভাবনা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখেছেন গবেষণার লেখকরা।
এ গবেষণায় চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, মঙ্গলে কীভাবে এত বেশি স্মেকটাইট গঠিত হয়েছে, সেটা খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে টেকটনিক প্লেট ওপরের দিকে উঠে আসার চেয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণার লেখকদের অনুমান বলছে, মঙ্গল গ্রহের পানি অলিভাইনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি এক ধরনের ম্যাগনেসিয়াম আয়রন সিলিকেট, যা পৃথিবী, মঙ্গল এমনকি গ্রহাণুর মধ্যেও থাকে। অলিভাইনের মধ্যে থাকা লোহা পানির অক্সিজেনকে আঁকড়ে ধরে রাখার পাশাপাশি হাইড্রোজেন ছেড়ে দেয়।
নির্গত হাইড্রোজেন পরবর্তীতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে মিথেন গঠন করে। এ প্রক্রিয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অলিভাইন স্মেকটাইটে রূপান্তরিত হয়, যা মিথেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডকে আটকে ফেলে।
নিজেদের হিসাবের ভিত্তিতে গবেষণা দলটি দাবি করছে, মঙ্গল গ্রহের আদিম বায়ুমণ্ডলের ৮০ শতাংশই এখন মঙ্গলের কাদামাটিতে আটকানো, যার ফলে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল এখন পাতলা হয়ে গেছে।
এ মডেলের সত্যতা থাকলে ভবিষ্যতে তা মঙ্গল গ্রহ অনুসন্ধানকারীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। আর গ্রহটির পৃষ্ঠের নীচে বিপুল পরিমাণ পানিই নয় বরং মিথেনের বড় মজুদ পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
আপনার মতামত জানানঃ