ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবৃতি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য স্বস্তিকর নয়। তিনি ভারতে বসে যেন এটা না করেন। এ বিষয়ে ভারতীয় হাইক মিশনার প্রণয় ভার্মাকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। বুধবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ভারতে বসে শেখ হাসিনা বিবৃতি দিলে সম্পর্কের ক্ষতি হবে বলে সে দেশের হাইকমিশনারকে জানানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বলেছি এটা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে না। এটা আমি তাকে বলেছি। কারণ সরকারের অবস্থান এটাই। এটা নিয়ে তিনি (হাইকমিশনার) কিছু বলেননি, তিনি বলতে পারেনও না। এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি সেখানে সেটি জানাতে পারেন।
শেখ হাসিনার বিবৃতিকে আমরা কী হিসাবে দেখব-এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সরাসরি হোস্টাইল অ্যাক্ট হিসাবে বলছি না। কিন্তু এটা তো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্তরায়, সেটাই তাকে বলার চেষ্টা করেছি। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে নিয়ে আমি কোনো কথা বলিনি।
এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। বুধবার তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রণয় ভার্মা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। আগামীতে আরও ‘গণকেন্দ্রিক সম্পৃক্ততার’ ওপর জোর দেন তিনি। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির সমাপ্তি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে ভারতের অতিরঞ্জিত মিডিয়া প্রচারের কথাও উল্লেখ করেছেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার নতুন দায়িত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছার উল্লেখ করেন এবং উভয় দেশের জনগণের ভাগাভাগি আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আগামীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ভারত সরকারের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন সরকার সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা বা ভয়ভীতি সহ্য করা হবে না। তিনি যোগ করেন, সব ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আপনার মতামত জানানঃ