ক’দিন আগেই সৌদি আরবে নারীদের বিচারকের আসনে বসার অনুমতি মেলে। এবিষয়ে বাস্তবায়নের প্রস্তুতিও নিচ্ছে কট্টর রক্ষণশীল দেশটি। এই সংবাদ বিশ্বে চাউর হবার পরই শোনা গেলো আফগানিস্তানের দুই নারী বিচারককে গুলি করে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। আজ রোববার(১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানী কাবুলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। কর্মস্থলে যাওয়ার পথেই হামলার শিকার হন তারা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের মুখপাত্র আহমাদ ফাহিম কায়িম।
আফগানিস্তান থেকে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা তুলে নেওয়া হচ্ছে, পেন্টাগনের এমন ঘোষণার দুদিন পরেই এই হামলা হলো। হামলায় তাদের গাড়ির চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে গাড়িতে থাকা দুই বিচারক গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। একে দেশজুড়ে চলমান সহিংসতার অংশ বলছে দেশটির সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র আহমেদ ফাহিম কায়িম জানিয়েছেন, কোর্টের গাড়ি দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন ওই দুই বিচারক। সে সময়ই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এক বিবৃতিতে ফাহিম কায়িম বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে, আজকের হামলায় আমরা দুই নারী বিচারককে হারালাম। তাদের বহনকারী গাড়িটির চালক হামলায় আহত হয়েছেন। ওই গাড়িটি তাদের সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই হামলার শিকার হলেন তারা।
ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, দেশটির শীর্ষ আদালতে ২০ জনের বেশি নারী বিচারক দায়িত্ব পালন করছেন। কাবুল পুলিশের পক্ষ থেকেও ওই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মুখপাত্র জামসিদ রাসুলি জানিয়েছেন, ওই নারী বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত ছিলেন।
এর আগেও ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় অন্তত ২০ জন প্রাণ হারান, আহত হয়েছিলেন ৪০ জনের বেশি মানুষ।
আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধ বন্ধে শান্তি ফেরাতে দেশটির সরকার ও তালেবানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। তালেবানের প্রথম শর্ত, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এরই অংশ হিসেবে দেশটি থেকে অর্ধেক সেনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তারপরও থামছে না হামলার ঘটনা।
গত কয়েক মাস ধরে রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, চিকিৎসক ও বিচারকসহ সাধারণ মানুষের ওপর আশঙ্কাজনকভাবে হামলার ঘটনা বেড়েছে। প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। দেশজুড়ে হামলার ঘটনার একটির দায়ও স্বীকার করেনি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান।
মাত্র একদিন আগেই দেশটিতে দুই মিলিশিয়া সদস্য নিজ দলের ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এই ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ হামলা বলে উল্লেখ করেছে। হেরাত পুলিশের মুখপাত্র আব্দুল আহাদ ওয়ালিজাদা শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, নিজেদের সহকর্মীদের হত্যার পর ওই দুই মিলিশিয়া সদস্য অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নিয়ে পালিয়ে গেছে।
এর আগে গত মাসের মাঝামাঝিতে মালালাই মাইওয়ান্দ(২০) নামের এক নারী সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। তার সাথে গুলিতে মারা যান তার গাড়িচালকও। তারা কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বন্দুকধারীরা তাদের ওপর হামলা চালালে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংশ্লিষ্টরা জানান, তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে কেবল নারীরাই অনিরাপদ নয়, মুক্তচিন্তার অধিকারী প্রত্যেকেই তাদের গুলির আওতাভুক্ত। পান থেকে সামান্য একটু চুন খসে পড়লেই তাদের হাত থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। নারী শিশু দুর্বল প্রতিবন্ধী কোনো বাছ বিচার নেই তাদের বন্দুকের নলা থেকে বেরিয়ে আসা গুলির। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশটি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একদিন জনশূন্যতার কারণে বিলীন হয়ে যেতে পারে, সেখানে মৃত্যুর আখড়া ব্যতিত অন্যকিছু টিকে থাকার সম্ভাবনা মুছে যাবে। অনেকে মনে করেন, দেশটি ইতিমধ্যেই সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ