ফরিদপুরের সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর বিরুদ্ধে এক মুক্তিযোদ্ধাকে গালিগালাজ ও লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ওই ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানালে তাকে আজ বুধবার(১৩জানু) প্রত্যাহার করে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
জানা যায়, গত শনিবার (০৯ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেনকে গালিগালাজ ও লাঠিপেটার অভিযোগ এনে ওসি জিন্নাহকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা। সালথা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ আলটিমেটাম দেন তারা। একই দাবিতে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) মানববন্ধন করেন নগরকান্দা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর স্থানীয় সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রত্যাহার করা হয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত শুক্রবার সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খলিশপুট্টি গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোশাররফ হোসেনসহ বয়োজ্যেষ্ঠ পাঁচ/সাতজন মীমাংসার জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন। ওই সময় ওই মুক্তিযোদ্ধার গায়ে পরিহিত কোর্টে মুক্তিযোদ্ধার নেমপ্লেট ছিল। পরে আহত অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, এই ঘটনায় আমরা বিচার চাই না, আমরা ওসির অপসারণ চাই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ওসিকে অপসারণের দাবি করছি। অপসারণ না করলে আমরা আবার রাজপথে নামব।
এ বিষয়ে সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পুলিশী পিটুনীর শিকার হয়েছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, শনিবার তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে এসেছেন। সংঘর্ষ ঠেকাতে পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন থানা থেকে অনেক পুলিশ আনা হয়। ওই সময় দু’পক্ষের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এর মধ্যেই অনাকাক্সিক্ষতভাবে হয়ত এ দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে।
সালথা ওসির বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাকে লাঠিপেটা করার অভিযোগের তদন্ত করতে শনিবারই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও পরে ওই কমিটির অনুরোধে আরও তিনদিন সময় বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার রাতে তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, পুলিশের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একইসাথে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে অভিযুক্তকে বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করে থাকেন। পুলিশের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার ফলে রাষ্ট্রে একদিকে যেমন অরাজকতা তৈরী হয়েছে অন্যদিকে দুর্বৃত্তরাও নিজেদের অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। কদিন আগেই পুলিশের আইজিপি ঘোষণা দিয়েছেন নিজেদের ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করবেন তারা। এতে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুলিশের অপকর্ম দিনদিন এতোই বেড়েছে যে, নিজেদের ঘর সামলাতে গিয়ে অন্যান্যদের সামলানোর জন্য পুলিশ আদৌ কোনো সময় পাবে কিনা সেবিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৮
আপনার মতামত জানানঃ