২০২৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত শুক্রবার জানিয়েছে, মূলত ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা বিপুল পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মুদ্রা সরবরাহের রাশ টানতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ফেডারেল রিজার্ভে যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থা রিজার্ভ সংরক্ষণ করে, তার সুদও বেড়েছে। ফলে ফেডের ব্যয় বেড়েছে।
সেই সঙ্গে ফেড ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র সংকুচিত করছে, অর্থাৎ তাদের হাতে যেসব বন্ড আছে, সেগুলো বাজারে বিক্রি করে অর্থ তুলছে। এ কারণে তারা একধরনের কাগুজে ক্ষতির মুখেও পড়ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদ অনুসারে, ২০২৩ সালে ব্যয় বাদ দেওয়ার পর ফেডারেল রিজার্ভের আয় ঋণাত্মক ঘরে চলে গেছে। যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, গত বছর ফেডের ক্ষতি হয়েছে ১১৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার। এক বছর আগে ২০২২ সালে তাদের মুনাফা হয়েছিল ৫৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার।
আমানতের সুদ বাবদ ফেডারেল রিজার্ভ গত বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৮ হাজার ১১০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে; আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে যা ছিল ১০ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে ফেডের হাতে থাকা বন্ড থেকে তারা সুদ আয় করেছে ১৬ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার; ২০২২ সালে যা ছিল ১৭ হাজার কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ফেডের মোট ১২টি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৫৫০ কোটি ডলার।
করোনাভাইরাসজনিত মহামারির সময় ফেড আগ্রাসীভাবে বন্ড কিনেছে। মূলত সুদহার কম রেখে অর্থনীতির পালে হাওয়া দিতে তারা তখন এভাবে বন্ড কিনেছে। এ প্রক্রিয়া ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’ নামে পরিচিত, যার মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থায় বিপুল অর্থ সঞ্চারিত হয়েছে এবং ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পক্ষে ঋণ করাও সহজ হয়েছে।
কিন্তু ২০২২ সাল থেকে নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা শুরু হওয়ার পর গত এক বছরের বেশি সময়ে ফেড এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের ট্রেজারি ও মর্টগেজ বন্ড বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। বন্ড বিক্রির অর্থ হলো বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়া। এ কারণে বাজারে তারল্যসংকট হয় এবং এ প্রক্রিয়ায় সুদ আয় কমে যায়। গত বছর ফেডের ঠিক তা–ই হয়েছে।
গত এক দশকে ফেডারেল রিজার্ভ সরকারের রাজস্ব বিভাগকে বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে সরকারের বাজেটঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। এখন সে লোকসানের মুখে। ফলে তার পক্ষে কিছুদিন সরকারের রাজস্ব বিভাগকে অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে না।
তবে ফেডের এই লোকসানের বিষয়টি বিস্ময়কর নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ২০২২ সালের মার্চ থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে তারা যেমন আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, তাতে এটা হওয়ারই কথা। মূল্যস্ফীতির চাপ এখন কমে আসছে। অনেকেই ধারণা করছেন, ফেড আর নীতি সুদহার বাড়াবে না অথবা তারা সর্বোচ্চ সুদহারের কাছাকাছি চলে গেছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা শেষ হওয়ার পর ফেড আবার মুনাফার ধারায় ফিরতে পারে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। তবে সেন্ট লুইস ফেডারেল রিজার্ভের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগি করার মতো পর্যায়ে ফেরত যেতে ফেডের আরও চার থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। তবে ক্ষতির মুখে থাকলেও ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষমতা খর্ব হবে না।
আপনার মতামত জানানঃ