গাজা থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) দূরে ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নীরবে একটি গোপন ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এ গোপন ঘাঁটির কোড নেম বা ছদ্মনাম ‘সাইট ৫১২’।
শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নেগেভ মরুভূমির মাউন্ট হার কেরেনে গোপন ঘাঁটিটি অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কয়েক কোটি ডলার খরচ করেছে এবং সেখানে রাডার সুবিধাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
যদিও মার্কিন সরকারের নথিতে এটিকে ‘লাইভ সাপোর্ট ফেসিলিটি’ বা কর্মীদের জন্য ব্যারাক কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্য ইন্টারসেপ্ট বলছে, এ ঘাঁটিতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি মার্কিন সরকার।
এর আগে ২০১৭ সালে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তজভিকা হাইমোভিচ এ ঘাঁটিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, আমরা প্রথমবারের মতো ইসরায়েল রাষ্ট্রে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করেছি।
তবে ওই বক্তব্যের ঠিক একদিন পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছিল যে, এটি একটি ইসরায়েলি ঘাঁটি, যেখানে মার্কিনিদের জন্য স্রেফ আবাসন সুবিধা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখে, সে জন্যই এ ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে।
ইন্টারসেপ্ট আরও বলছে, পেন্টাগন নিঃশব্দে গাজা উপত্যকা থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে নেগেভ মরুভূমির গভীরে গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের জন্য এগিয়ে চলেছে। এই ঘাঁটির কোডনাম দেওয়া হয়েছে সাইট-৫১২।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী এই ঘাঁটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাডার স্টেশন হিসেবে কাজ করবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে।
৭০০ মাইল দূরে অবস্থিত ইরান থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে কি না, মূলত সেদিকেই এই ঘাঁটির নজর থাকবে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হাজার হাজার রকেট দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় এবং সেসব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল।
ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই মাস আগে পেন্টাগন সাইট ৫১২-তে মার্কিন সেনাদের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করতে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের একটি চুক্তি করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন দাবি করছে, বর্তমান যুদ্ধে জড়িত হওয়ার জন্য ইসরায়েলের অভ্যন্তরে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অধিকৃত ভূখণ্ডে এরই মধ্যে গোপন মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে এবং সরকারি চুক্তি এবং বাজেট বরাদ্দের নথিপত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, দিন দিন তা বাড়ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ফের সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। উপত্যকাটির অবস্থাকে দুঃস্বপ্ন আখ্যা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য ফের আহ্বান জানিয়ে সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা নিয়ে আজ রোববার (২৯ অক্টোবর) গুতেরেস বলেন, প্রতি ঘণ্টায়ই সেখানকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে নেপাল সফরে রয়েছে গুতেরেস। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায়ই গাজার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমি খুবই দুঃখিত কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ মানা হচ্ছে না। মানবিক যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে ইসরায়েল সামরিক অভিযান জোরদার করেছে।’
গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ৪০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বন্দি করা হয় ২৩০ জনকে।
হামলার জেরে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় আট হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ