দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মূল্যমান সবচেয়ে বেশি কমেছে এমন তৃতীয় মুদ্রা হলো বাংলাদেশি টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় গতকাল পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে মূল্যমান পতনের বিচারে একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্বলতম মুদ্রা ছিল শ্রীলঙ্কান রুপি।
আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে অন্যান্য দেশ ঘুরে দাঁড়ালেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অবনমনের পথেই রয়েছে টাকা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপির ডলারের বিপরীতে ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ১ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হতো ৩০৭ পাকিস্তানি রুপি। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৭৭ রুপি। মুদ্রার অবমূল্যায়নের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্রই প্রকাশ পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশ কোনো পলিসি না নেয়ার কারণে ভালো করতে পারছে না। সরকার থেকে প্রয়োজনীয় কোন উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না।
মূল্যমান পতনের বিচারে ২১শে অক্টোবর ২০২০ থেকে ২১শে অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত এশিয়ার দুর্বলতম মুদ্রা ছিল শ্রীলঙ্কান রুপি। এ সময়ে ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শ্রীলঙ্কান রুপির পর সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে পাকিস্তানি রুপির। গত তিন বছরে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ১১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মূল্যমান সবচেয়ে বেশি কমেছে এমন তৃতীয় মুদ্রা হলো বাংলাদেশি টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় গতকাল পর্যন্ত মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। পতন বেশি হয়েছে এমন চতুর্থ মুদ্রা হলো নেপালি রুপি। এ সময়ে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। নেপালি রুপির পর মুদ্রার বড় ধরনের পতনের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারতীয় রুপি।
গত তিন বছরে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্যমান কমেছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ভুটানের মুদ্রা গুলট্রাম। গত তিন বছরে মুদ্রাটির পতন হয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। তবে গত তিন বছরে ডলারের বিপরীতে উন্নতি করেছে আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানি ও মালদ্বীপের রুফিয়াহ। বিজনেস ইনসাইডার জানাচ্ছে, ২০২০ সালের অক্টোবরের শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আফগানিস্তানের মুদ্রা আফগানির ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দাম দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ফিরে এসেছে পাকিস্তানি রুপি। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মুদ্রাগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি রুপির দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিজনেস ইনসাইডার জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপির ডলারের বিপরীতে ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ১ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হতো ৩০৭ পাকিস্তানি রুপি। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৭৭ পাকিস্তানি রুপি।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের তথ্য বলছে, পাকিস্তান সরকার অবৈধ ডলার বাণিজ্যের বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করায় পাকিস্তানি রুপির ভাগ্য ফিরেছে। পাশাপাশি চলতি মাসে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপিই সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই রুপির দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। বৈশ্বিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা ডলারের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্রে সুদ হার দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ থাকবে- এমন অনুমানের পর থাই বাথ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়ানসহ বেশির ভাগ মুদ্রারই ডলারের বিপরীতে দাম পড়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানি রুপি যা করেছে, তা একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
এ ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা যখন খারাপ হয় তখন সেই দেশের মুদ্রার অবনমন হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। এজন্য যেই ধরনের পলিসি নেয়ার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ সেটি নেয়নি। শুধু বড় বড় কথা বলেছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণেই হোক আর স্বার্থানেষী মহলের চাপেই হোক সরকার থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তবে পাকিস্তান উন্নতি করছে কিন্তু তারাও খারাপ পরিস্থিতিতে আছে।
আপনার মতামত জানানঃ