বাংলাদেশের অর্থনীতি যে এত দ্রুত পরিবর্তন হবে সেটি কেউ ভাবতে পারেনি। সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদের কাছেও এ পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। বেসরকারি খাতও স্নায়ুচাপে। তারাও মনে করছে না যে বাংলাদেশ সহজেই এ থেকে বের হতে পারবে। বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার দেশের দূতাবাসগুলো তাদের দেশের কোম্পানির পাওনা আদায়ে দৌড়ঝাঁপ করছে।
বিদেশী অনেক ব্যাংক বাংলাদেশের এলসি খুলছে না কিংবা অনীহা দেখাচ্ছে। এমনকি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যবসা বাড়িয়েছেন এমন অনেক ব্যবসায়ীও (বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের) এখন সরকারের কাছ থেকে পাওনা অর্থ ছাড় করতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ না করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকই এখন চাপের মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির বাড়-বাড়ন্তে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের মাসের তুলনায় এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা ১২ শতাংশের নিচে নামানো যায়নি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। নিট রিজার্ভ ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত সেপ্টেম্বরেই রিজার্ভ কমেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যেখানে গত দুই বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। রিজার্ভের ক্রমপতনে সরকারের আমদানি সক্ষমতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপানি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্প প্রবৃদ্ধিতে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও এক অংকে নেমে গেছে। অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস রফতানিতেও সুখবর নেই। তৈরি পোশাক থেকে রফতানি আয় বাড়লেও অন্যান্য খাতের রফতানি কমেছে।
পাশাপাশি বৈদেশিক আয়ের আরেক বড় উৎস রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও এখন নিম্নমুখী। গত সেপ্টেম্বরে ৪১ মাসের মধ্যে দেশে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দামে বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এতে ডলারের প্রাপ্যতার সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। এমনকি অনেক ব্যাংকই ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না।
অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এখন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। তারা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু এক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
সামগ্রিকভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরো স্মার্ট হওয়া উচিত বলে মনে করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। গণমাধ্যমকেকে তিনি বলেন, ‘আর্থিক ব্যবস্থাপনা যত স্মার্ট হবে, অর্থনীতি ততই লাভবান হবে। আমাদের অর্থনীতির বহিঃখাতনির্ভরতা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন আবার মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ। হঠাৎ করে এখন আবার জ্বালানির দাম বাড়ছে। আমদানিনির্ভরতার জন্য আমাদের ওপর অভ্যন্তরীণ সমস্যার চেয়ে বাইরের সমস্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ প্রেক্ষাপটে যথাযথ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে এখনই নজর দেয়া খুব জরুরি।’
বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতার বিষয়টিও এখন অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে মাত্র ৬৪ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে গত অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ জুনে সরকারকে ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর তিন মাস পেরুলেও গত জুনের বাজেট বাস্তবায়নের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি সরকার। ফলে গত অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণও বাড়ছে না সরকারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আলোচ্য অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যদিও অর্থবছর শেষে সংস্থাটির আহরিত রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আহরণ না হওয়ায় কর-জিডিপির অনুপাত ক্রমেই কমছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৭ শতাংশ। এর পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়ায়। অবশ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে এটি কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাস (জুলাই-মে) শেষে কর-জিডিপির অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশে।
লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায় না হলেও সরকারের ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। আর এ ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে স্থানীয় ও বিদেশী উৎস থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। এতে সরকারের ঋণের বোঝাও দিন দিন আরো ভারী হচ্ছে। একদিকে কর-জিডিপি কমছে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ঋণ-জিডিপি অনুপাত। এতে অর্থনীতি হয়ে পড়ছে আরো ভারসাম্যহীন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ছিল ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কিছুটা বেড়ে ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ-জিডিপি অনুপাত আরো বেড়ে হয় ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ-জিডিপি অনুপাত দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ১ শতাংশে।
সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধুনালুপ্ত রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকেকে বলেন, ‘কর-জিডিপি অনুপাত ক্রমেই কমার কারণ হচ্ছে একদিকে জিডিপি বাড়ছে, মানে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে। অন্যদিকে কর আহরণ সে অনুপাতে বাড়ছে না। এছাড়া বড় বড় প্রকল্পে কর রেয়াত দেয়া হয়েছে। এতে এসব প্রকল্পে উন্নয়ন ব্যয় হলেও সেখান থেকে কোনো রাজস্ব আসেনি। যে হারে জিডিপি বাড়ছে, সে হারে কর আহরণ না বাড়ার কারণেই কর-জিডিপি অনুপাত কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে রাজস্ব বাড়ানোর দিকে সেভাবে দৃষ্টি না দিয়ে ঋণ করে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলো থেকেই সেভাবে রিটার্ন আসছে না। পাশাপাশি এগুলো নির্মাণের সময় ব্যয় বেড়েছে অনেক। গত ১০ বছরে যে ঋণ নেয়া হয়েছে, তার অনেকগুলোই স্বল্পমেয়াদের এবং কঠিন শর্তে। ফলে এসব ঋণ শোধ করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এটিও এ সংকটকে আরো তীব্র করেছে।’
ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপ এখন শঙ্কিত করে তুলছে অর্থনীতিবিদদের। বিশেষ করে কঠিন শর্তের বিদেশী ঋণ সরকারের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে উঠছে। ক্রমেই ক্ষীয়মান রিজার্ভের কারণে সামনের দিনগুলোয় বিদেশী ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এরই মধ্যে এ চাপের বিষয়টি কিছুটা দৃশ্যমানও হয়ে উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে ঋণের কিস্তি পরিশোধ প্রলম্বিত করার মাধ্যমে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। গত জুন শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে সরকারের বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকেকে বলেন, ‘জিডিপির পরিসংখ্যান নিয়েই আমাদের সংশয় রয়েছে। বিনিয়োগ, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি না হওয়া সত্ত্বেও জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এক্ষেত্রে তো হিসাব মেলে না। কৃত্রিমভাবে জিডিপি বাড়িয়ে দেখানোর সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। বাড়িয়ে দেখানো হলে জিডিপির অনুপাতে ঋণের অনুপাত কমে যায়।
অন্যদিকে অসুবিধা হচ্ছে এতে কর-জিডিপি অনুপাতও কমে যায়। বাহ্যিক খাত বাদ দিলে সরকার বর্তমানে দুটি কাঠামোগত সংকটের মধ্যে রয়েছে। একটি হচ্ছে রাজস্ব আহরণ করতে না পারা এবং আরেকটি হলো ব্যাংক খাতে অর্থ সঞ্চালন করতে না পারা। যেহেতু কর তথা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ হচ্ছে না, সেহেতু ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ঋণ করতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেক প্রকল্পে প্রচলিত দাতারা ঋণ দিচ্ছে না। সেজন্য স্বল্পমেয়াদে ও বেশি সুদে অন্য উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ঋণের যে বোঝা সেটির কারণে একসময় ন্যুব্জ হতেই হবে।’
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে বর্তমানে সংস্থাটির একটি দল বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটি যদি ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে তা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। এ অবস্থায় রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই।
চলমান অর্থ সংকটের বড় প্রভাব পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে এ খাতের অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পেরেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে বকেয়া আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারাও। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আইপিপি) ও জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে সরকারের দুই সংস্থার দেনার পরিমাণ গত মাস পর্যন্ত ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল। বর্তমানে অর্থ বিভাগ টাকা ছাড় করায় বকেয়ার পরিমাণ কিছুটা কমলেও তা ৩০ হাজার কোটি টাকার কম নয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইপিপিগুলোর কাছেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বকেয়া দেনা সবচেয়ে বেশি। গত মাসের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার বকেয়া ছিল। যদিও এরই মধ্যে কিছু কিছু করে বকেয়া পরিশোধ করছে সরকার।
এছাড়া জ্বালানি তেল আমদানিতে সরবরাহকারীদের কাছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং এলএনজি আমদানি কার্যক্রমে নিয়োজিত পেট্রোবাংলারও বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রয়েছে। সরকারের এ দুই সংস্থার কাছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বকেয়া ছিল। মার্কিন কোম্পানি শেভরনের বকেয়া আদায়ে দেশটির দূতাবাসও দৌড়ঝাঁপ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যেহেতু আমরা উন্নয়নশীল দেশ সেহেতু কম হোক আর বেশি হোক, আমাদের অর্থনীতিতে সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগোতে হবে। ঋণ-জিডিপি অনুপাত বাড়বে। এটি বাড়ার দরকার, কারণ আমাদের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। আইএমএফের মতে জিডিপির ৬৭ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেয়া যায়। সে অনুসারে আমাদের ঋণ অনেক কম আছে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রাজস্ব আয় বাড়ার তুলনায় জিডিপি বাড়ছে বেশি।
সে কারণে কর-জিডিপি অনুপাত কমে যাচ্ছে। এটি নিয়েও ভয়ের কিছু নেই, কারণ এই নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত দিয়েই আমরা ৮ শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি করেছি। এটি আমাদের প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা হয়ে ওঠেনি। তবে এটি আরো বাড়াতে পারলে ভালো হতো। আমরা আরো বেশি বিনিয়োগ করতে পারতাম। কর-জিডিপি বাড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা আছে। সামনে মানুষের আয় বাড়লে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে এবং রফতানি বাড়লে কর আহরণও বাড়বে।’
আপনার মতামত জানানঃ