করোনাভাইরাস আতঙ্কে লকডাউনে আছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। অতি সংক্রামক এই ভাইরাসে পৃথিবীব্যাপী আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, টিস্যু পেপারের মতো জিনিসের চাহিদা। তবে অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে, এসবের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাঁজার চাহিদা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তরুণরা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ছেড়ে গাঁজা সেবন বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে এক গবেষণায় জানানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে হ্যারিস পোল এ সংক্রান্ত একটি জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি অংশ নেয় যাদের বয়স ২১ বছরের বেশি। অংশগ্রহণকারীরা মদ অথবা গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন। জরিপ থেকে জানা যায়, এসব তরুণের এক-তৃতীয়াংশ যারা বিনোদনের জন্য গাঁজা সেবন করে তাদের মদের প্রতি আগ্রহ কম। তাদের ৪২ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনার সময়ে তারা সেবন করা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর ৪৫ শতাংশ জানান তারা করোনার সময়ে মদের পরিবর্তে গাঁজা সেবন শুরু করেন।
যারা করোনার সময়ে গাঁজা সেবন বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের ৫৪ শতাংশ বলেন, তারা উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তা কমাতে এর ব্যবহার বেশি বেশি করেছেন। ৫০ শতাংশ জানান, গাঁজা তাদের প্রশান্তি এনে দেয়। ৩৩ শতাংশ জানান, তারা অ্যালকোহল ছেড়ে গাঁজা ধরেছেন।
জরিপটি সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গাঁজা উৎপাদন ও সরবরাহকারী সংস্থা কিউরেলিফ। তারা জানান, মহামারি শুরুর পর থেকে আমরা দেখেছি আমাদের ডিসপেন্সারিতে নতুন গ্রাহকের সমাগম বেড়েছে।
এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ‘হেডসেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জরিপ চালান। সেখানে জানানো হয়েছিল, করোনা সংকটের মাঝে দেশটিতে গাঁজার চাহিদা অনেক বেড়েছে৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্চের মাঝামাঝি দিকে এক সপ্তাহে গাঁজা বিক্রি শতকরা ৬৪ ভাগ বেড়েছিল৷ ২০১৯ সালের শুরু থেকে অর্থাৎ এক বছরেরও বেশি সময় এত গাঁজা বিক্রি কখনোই হয়নি৷
যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিল মাসে গাঁজা বিক্রি আরো বেড়ে যায়৷ বেশিরভাগ রাজ্য গাঁজাকেও ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের’ মর্যাদা দেয়ায় ক্রেতাদের মাঝে গাঁজা কিনে রাখার প্রবণতা বাড়তে থাকে৷
‘প্রোহিবিশন পার্টনার্স’ নামের ডেটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা স্তেফেন মারফি মনে করেন, রাজ্যগুলোর এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গাঁজা শিল্পের ক্রমশ বেড়ে চলার গুরুত্ব স্বীকার করে নেয়া হয়েছে৷ তবে এ শিল্পের বিকাশে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি৷
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপের অনেকগুলো দেশ ও কানাডাতেও গাঁজার বিক্রি আর চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তবে যুক্তরাজ্যে গাঁজার দাম বেড়েছে আড়াই গুণ পর্যন্ত। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের পূর্ণ বেতনে ছুটি দেওয়ায় চাহিদার পাশাপাশি দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। যদিও যুক্তরাজ্যে গাঁজা অবৈধ।
করোনা সংকটে কানাডায় অনলাইনে গাঁজা বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য, টয়লেট পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পাশাপাশি বাড়িতে গাঁজা মজুদ করে রাখার যেন ধুম পড়েছে ইউরোপের দেশগুলোতেও। দেশভেদে সুবিধা অনুযায়ী অনলাইন কিংবা অফলাইনে খুঁজে গাঁজা কিনছেন সেবনকারীরা। সুযোগ পেয়ে অথবা সরবরাহ কম থাকার দোহাই দিয়ে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে বাংলাদেশে গাঁজা অবৈধ হলেও অন্যান্য সময়ের চেয়ে করোনা সংকটে এর চাহিদা বেড়েছে অনেক। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীতে গাঁজা এসেছে প্রচুর। যদিও অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম বেশি ছিল।
সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাকালীন সংকটে তরুণদের মাঝে বিষণ্ণতা ও হতাশা কাজ করেছিল বেশি। যার ফলে অন্যান্য মাদকের তুলনায় গাঁজা সেবনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এছাড়া করোনার সময়ে গাঁজায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে গাঁজার দিকে তরুণরা ঝুঁকে পড়ে। এমনকি কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গাঁজা থেকে করোনা ভ্যাকসিন তৈরীর অনুমোদন চাইলে তরুণদের মাঝে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তাছাড়া গাঁজা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবেও এই সময় প্রচার হতে থাকে। ফলে অন্যান্য মাদক বা পানীয়ের তুলনায় তরুণদের মাঝে গাঁজা সেবনের চাহিদা তৈরী হয়।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২৫০
আপনার মতামত জানানঃ