মোহাম্মদ রুবেল
বাংলাদেশের গদিনশীল পীরদের মধ্যে চরমোনাই শায়েখ অন্যতম। বিশাল আশেকান গোষ্ঠীর প্রশ্নবিহীন আনুগত্য ও হাদিয়ায় টুইটুম্বুর চরমোনাইয়ের অর্থভান্ডার। এবার তিনি তার সম্রাজ্য বিস্তারে বরিশাল সিটির দিকে নেক নজর দিয়েছেন। যথারীতি হাতপাখা মার্কা নিয়ে ভোটারদেরকে শীতল বাতাস করে ভোট কামনা করছেন। বিষয়টা এ পর্যন্ত হলে বলার কিছু ছিলনা। কারণ গণতন্ত্রের চারণভূমি ভারতে মোদিজী ধর্মের দোকান খুলতে পারলে চরমোনাই বাদ যাবে কেন! তাইতো চরমোনাই প্রকাশ্য বয়ান দিলেন, তাদের হাতপাখায় ভোট দিলে ভোট পাবে স্বয়ং আল্লাহ ও তার রাসূল। চরমোনাইয়ের এমন ফতোয়ায় নিম্নোক্ত ঐতিহাসিক ঘটনাটা খুবই প্রাসঙ্গিক।
১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের সাথে ফাতিমা জিন্নাহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করলে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইসলামী দলগুলো ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন দেন। সুচতুর আইয়ুব খান ধর্মের একটা টার্ম কার্ড খেলেন। আইয়ুবের চেলারা চারদিকে প্রচার করতে লাগলো, যেহেতু ফাতিমা জিন্নাহ একজন মহিলা সেহেতু তাকে ভোট দেওয়া হারাম, কারণ ইসলাম নারী নেতৃত্ব সমর্থন করে না। ইতোমধ্যে আইয়ুব খান তৎকালীন একজন প্রখ্যাত পীরকে নিজের পক্ষে বিবৃতি দেওয়াতে সমর্থ হন। পীর সাহেব ফতোয়া দিলেন, তিনি নাকি স্বপ্নযোগে আধ্যাত্মিক শক্তিবলে জানতে পেরেছেন আল্লাহ তায়ালা ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচনী গোষ্ঠীর ওপর নাখোশ হয়েছেন। পীরের এই বিবৃতি দেখে তাকে সমর্থন করে কয়েকজন মাওলানা ফতোয়া দিলেন ইসলাম নারীর প্রতিনিধিত্ব সমর্থন করে না।
আইয়ুবের পক্ষে কতিপয় পীর- মাসায়েখের এমন কান্ড দেখে ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষের আলেম- ওলামারাও পাল্টা টার্ম কার্ড খেলতে লাগলেন। এমন সময় ফাতিমা জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন তিনি নির্বাচিত হলে বড়জোর একবছর ক্ষমতায় থাকবেন। এ কথা শুনে তৎকালীন জামাত ইসলামের শীর্ষ আলেম মাওলানা শফি ফতোয়া দিলেন, যেহেতু ফাতিমা জিন্নাহ গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে লড়বেন এবং জয়ী হলে এক বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকবেন না সেহেতু নারী নেতৃত্ব কায়েম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তাই মিস জিন্নাহকে ভোট দিলে শরিয়তের কোন ক্ষতি হবে না। জামাত ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী জেলে বসেই বিবৃতি দিলেন, পুরুষ হওয়া ছাড়া আইয়ুবের কোন গুণ নেই, আর মহিলা হওয়া ছাড়া ফাতিমা জিন্নাহর কোন দোষ নেই। ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচনের অন্যতম প্রচারক সাবেক গভর্ণর আজম খান, বিভিন্ন জনসভায় বলতেন, বদরের যুদ্ধে রাসূলের সহায়তার জন্য আল্লাহ যেমন ফেরেস্তা পাঠিয়েছেন তেমনি এই নির্বাচনী যুদ্ধে ফাতিমার বিজয়ের জন্য আল্লাহ লাখ লাখ ফেরেস্তা নাজেল করবেন। উল্লেখ্য, ফাতিমা জিন্নাহকে নির্বাচনে দাঁড় করানোর জন্য সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রেখেছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
নির্বাচনে দুই শিবিরের মধ্যে হালাল – হারামের ফতোয়া শুনে বাম শিবিরে সুনসান নিরবতা নেমে আসে।এজন্যই হয়তো ঐ নির্বাচনে মস্কো পন্থি বামেরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে আর ফতোয়ার খেলা উপভোগ করেছে।আলেমরা একজন সামরিক প্রশাসক ও একজন নারী নেএীকে নিয়ে পরিস্থিতি কখনো বেহেশত, কখনো দোজখ বানিয়ে ফেলতো তাদের বক্তিতা বিবৃতিতে। রাজনীতির দুষ্ট পথে যখন ধর্মকে প্রবেশ করানো হয় ধর্ম তখন পিষ্ট হয় ব্যালটের তলায়। নীতিবোধ আটকে যায় ব্যালট বাক্সে। আসলে ফতোয়ার রাজ্যে সবই হালাল হয়ে যায়। পরিবর্তন শুধু ফাতিমার স্থলে শায়খে চরমোনাই।
মোহাম্মদ রুবেল, ভিয়েনা
আপনার মতামত জানানঃ