প্রায় অর্ধেক মার্কিন নাগরিক ব্যাংকে রাখা অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এক গ্যালোপ জরিপে এই তথ্য জানা গেছে। সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচারের মতো বড় বড় দুটি ব্যাংকের পতনের এক মাস পর এই জরিপ চালায় গ্যালোপ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ মার্কিনিই ব্যাংকগুলোকে আর ভরসা করছেন না।
জরিপে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়। এতে ১৯ শতাংশ জানান যে, তারা ব্যাংকে রাখা নিজেদের অর্থ নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। অপরদিকে ২৯ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা এ নিয়ে ‘সামান্য উদ্বিগ্ন’। অপরদিকে ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা খুব একটা চিন্তিত নন এবং মাত্র ২০ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত।
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পড়ে গ্যালোপ একই ধরণের একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেসময় যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল, এবারের জরিপে অনেকটা তেমন ফলাফলই দেখা গেছে। দেখা গেছে রিপাবলিকান সমর্থকরাই তাদের অর্থ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। রিপাবলিকানদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, যেখানে ডেমোক্রেটদের মধ্যে এই হার ৩৬ শতাংশ।
এর আগে গতকাল জানা যায় নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে প্যাকওয়েস্ট ব্যাংকের শেয়ারদর ৬০ শতাংশ পতন হয়েছে। বিপর্যয় থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখনি বিপাকে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকটি। একই পরিস্থিতি অপর আঞ্চলিক ব্যাংক ওয়েস্টার্ন অ্যালায়েন্সের। আজ পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারদর ৩৮ শতাংশ কমেছে। খবর টেলিগ্রাফ।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, বিক্রিসহ বিভিন্ন কৌশলগত নীতি গ্রহণের কথা ভাবছে প্যাসিফিক ওয়েস্টার্ন ব্যাংক বা প্যাকওয়েস্ট ব্যাংক। সিএনএন বলছে, ওয়াল স্ট্রিটের পরিভাষায় ‘কৌশলগত নীতি অনুসন্ধান’ মানে ‘দয়া করে আমাকে সাহায্য করো’। এর আগে একই ধরণের ভাষা প্রয়োগ করেছিল ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। গত সোমবার বিপর্যস্ত ওই ব্যাংকটি কিনে নেয় জেপি মরগান চেজ।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতে বড় বিপর্যয়ের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উপরে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকরা এখন দমকলকর্মী হয়ে নিজের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে এই আগুন থেকে রক্ষার রাস্তা খুঁজতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে গেছে বড় দু’টি ব্যাংক। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমানতকারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যাংকিং খাতের সংকট চাপা থাকছে না। এই সংকট এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিনিয়োগকারী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক রিপোর্টে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বৃদ্ধির কৌশল হাতে নিয়েছিল। সেটিই এখন ব্যাংকিং খাতের ওপর পাল্টা আঘাত হেনেছে। চলমান এই অস্থিতিশীলতা থামাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন তাদের এই সুদের হার বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে চাইছে। মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে গত কয়েক দশকের মধ্যে সব থেকে দ্রুত গতিতে সুদের হার বাড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। এর ফলে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই বাধাগ্রস্ত হয়নি, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বন্ডের দামও পড়ে গেছে।
এই পরিণতি ঠেকাতে এখন তৎপর হয়ে উঠেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা, সুদের হার বৃদ্ধির কারণে মহাদেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ফলে জার্মানির কেন্দ্রীয় বুন্দেস ব্যাংক তাদের ক্রাইসিস টিমকে ব্যাংক এবং বাজারের সম্ভাব্য পতন মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির কমার্স ব্যাংকের শেয়ারের দাম এরই মধ্যে ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এদিকে বৃটেনে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা কিনে নিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক।
বিনিয়োগকারী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের এই সংকটের কারণে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে সেটিই বিশ্বজুড়ে অন্য ব্যাংকগুলোকে সংকটে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সাবেক ডেপুটি গভর্নর বলেন, যখন আপনি এই পর্যায়ে সুদের হার বৃদ্ধি করবেন তখন কোথাও না কোথাও ভাঙন শুরু হবেই।
তবে বিশ্লেষকরা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন যে, এখন পর্যন্ত ২০০৮ সালের মতো বিশ্বব্যাপী মন্দা শুরু হওয়ার তেমন একটা আশঙ্কা নেই।
এসডব্লিউএসএস১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ