এখন পর্যন্ত মানুষের বাসযোগ্য গ্রহ একটিই—পৃথিবী। এ কারণে বিকল্প বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের চেষ্টার অন্ত নেই। যুগ যুগ ধরে চলছে এই প্রচেষ্টা। কখনো কখনো সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে বিজ্ঞানীরা আলোড়ন সৃষ্টি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) গত সোমবার বলেছে, পৃথিবীর অদূরেই একটি ‘বাসযোগ্য’ গ্রহের খোঁজ পাওয়া গেছে।
মূলত মহাকাশে বিজ্ঞানীরা ২০২২ সালে নতুন নতুন গ্রহ আবিষ্কার করে চমকে দিয়েছেন। আমাদের সৌরজগতের বাইরে গত বছর ২০০ নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। একে মহাকাশবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আবিষ্কার বলা হচ্ছে। গত বছরের শুরুতে সৌরজগতের বাইরে আবিষ্কৃত গ্রহের মোট সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের কম। কিন্তু বছরের শেষ দিকে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ২৩৫টিতে।
কিন্তু কেন? কেন এতো গ্রহের সন্ধান? যদিও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ উত্তরটাও আমাদের জানা। আমাদের প্রিয় পৃথিবী হয়ে পড়ছে বসবাসের অযোগ্য। আর তাই বিজ্ঞানীদের এতো ব্যস্ততা।
এদিকে, আমাদের সৌরজগতের বাইরে গ্রহ বা এক্সোপ্লানেট আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে নাসার জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ। হাবল টেলিস্কোপের পর মহাকাশে পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ এটি। তবে হাবল টেলিস্কোপটি এখন সক্রিয় রয়েছে। এ টেলিস্কোপ থেকেও নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন গবেষকেরা। তবে গত জুলাই মাসে কার্যক্রম শুরুর পর জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি একের পর এক চমক দিয়ে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে বহির্জাগতিক জীবনের নানা লক্ষণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রক্সিমা বি আবিষ্কার করা হয়েছে। পৃথিবী থেকে মাত্র ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে এ এক্সোপ্ল্যানেট। এই অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে গ্রহের অবস্থান রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পৃথিবীর অনুরূপ ভর ও নিজের নক্ষত্রের বয়সের সাথে মিলে যাওয়ার জন্য এটিকে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিশীল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
অ্যাস্ট্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রক্সিমা বি গ্রহে তরল জলের অস্তিত্ব থাকতে পারে। আমরা জানি জল হচ্ছে জীবনের জন্য একটি মূল উপাদান।
গবেষকরা মহাসাগরের সাথে প্রক্সিমা বি এর জলের অবস্থানের সিমুলেশন মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে। বহিঃগ্রহের ক্ষেত্রে এ ধরনের গবেষণা এবারই প্রথম। প্রক্সিমা বি একদিকে সর্বদা তারার মুখোমুখি এবং অন্য দিকটা চিরকাল অন্ধকার হয়ে থাকে।
অন্ধকার দিকে জল হিমায়িত প্রকৃতির হয়ে থাকে। পাশাপাশি সেখানে সমুদ্রের অবস্থানও থাকতে পারে যা সিমুলেশন থেকে জানা গিয়েছে। কাজেই গ্রহের মধ্যে তরল জলের অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে যে, প্রক্সিমা বি গ্রহে বাসযোগ্য জলবায়ু এর অস্তিত্ব থাকতে পারে। এমনকি রাতের বেলায় এই জলবায়ুর প্রকৃতির তেমন পরিবর্তন হবে না। সেখানে জলের প্রকৃতি কেমন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
উদাহরণ হিসেবে লবণাক্ততার মাত্রার কথা বলা যেতে পারে। সেখানে গ্রীন হাউজ গ্যাসের ঘনত্ব কী রকম সেটাও দেখার বিষয়। তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে প্রক্সিমা বি গ্রহের তাপমাত্রা বেশ ঠান্ডা থাকবে। তবে সেখানে তরল জলের আবিষ্কার আমাদের সৌরজগতের বাইরে জীবনের সন্ধানে বড় একটি পদক্ষেপ বললে মনে করা হচ্ছে।
এসডব্লিউএসএস/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ