মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন এ প্রজন্মের যত বিজ্ঞানী, নিশ্চিত সে তালিকায় একেবারে উপরের দিকে থাকবে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের নাম। যে খ্যাতি, যে ভালোবাসা হকিং পেয়েছিলেন তা তিনি যে কেবল বিজ্ঞানে তার অসামান্য প্রতিভার জন্য পেয়েছিলেন তা নয়, বরং নিজের রসবোধের জন্যও তিনি ভালোবাসা পেয়েছিলেন মানুষের।
হুইল চেয়ারে বসেই দৃশ্যত মহাবিশ্ব ভ্রমণ করেছেন স্টিফেন হকিং। ৭৬ বছর বয়সে সেই হকিং সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর তিনি ফিরবেন না। তবে জীবদ্দশায় মানবসভ্যতা কীভাবে এবং কবে ধ্বংসের মুখোমুখি হবে, সে বিষয়ে ভয়ংকর কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে পরমাণু যুদ্ধের মতো নানা বিষয় মানবসভ্যতা ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ রকম কয়েকটি বিষয় নিয়ে তিনি যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সেগুলো থেকে সতর্ক থাকা উচিত। হকিংয়ের শীর্ষ ৫ ভবিষ্যদ্বাণীর একটি তালিকা করেছে কেমব্রিজ নিউজ।
আগুনের গোলায় পরিণত হতে পারে পৃথিবী
হকিং পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তাঁর ধারণায় বলেন, ৬০০ বছরের কম সময়ের মধ্যেই আমরা সবাই মারা যাব। কারণ, পৃথিবীতে মানুষ বেড়ে যাবে এবং আমাদের যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে, এতে পুরো পৃথিবী পুড়ে লাল হয়ে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবী আগুনের গোলায় পরিণত হবে। চীনের বেইজিংয়ে টেনসেন্ট উই সামিটে তিনি এ তত্ত্ব দেন।
ওই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা তাদের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। হকিং বলেন, ২৬০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মানুষের কাঁধে কাঁধ ঠেকে যাবে। তাদের যে বিদ্যুৎ লাগবে, এতে পৃথিবী লাল গোলা হয়ে যাবে। পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে মার্কিন টিভি সিরিজ ‘স্টার ট্রেক’ থেকে ধারণা নিতে হবে। যেখানে কেউ যায়নি—এমন কোথাও বা ভিনগ্রহে দ্রুত জায়গা খুঁজে নিতে হবে এবং আলোর গতিতে যোগাযোগের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
রোবটেরা দুনিয়া দখল করবে
টার্মিনেটর চলচ্চিত্রটি দেখেছেন নিশ্চয়ই? এ বছরেই অধ্যাপক হকিং কৃত্রিম বুদ্ধিমানেরা মানুষকে হটিয়ে দেবে—এমন আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। উইয়ার্ড ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হকিং বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে আমাদের যেমন সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত, তেমনি এটা মনে রাখতে হবে যে তারা হবে বিপজ্জনক। তিনি আরও বলেন, আমার ভয় হচ্ছে, তারা সত্যিই মানুষকে হটিয়ে দেবে। মানুষ যদি কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করতে পারে, তবে কেউ এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমান তৈরি করে বসবে, যে তাকেই সরিয়ে দেবে। এটা জীবনের আরেকটি রূপ হবে এবং বুদ্ধির দিক থেকে মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে।
পারমাণবিক বোমা ও মানুষের আগ্রাসনে ধ্বংস হবে পৃথিবী
বর্তমানে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেকগুলো দেশের হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যেকোনো সময় বেধে যেতে পারে যুদ্ধ। ৭৫তম জন্মদিনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মানুষের ভেতর লোভ ও আগ্রাসন তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষ কমার কোনো লক্ষণ তাতে নেই। সমরাস্ত্র ও যুদ্ধসরঞ্জাম পৃথিবীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখতে হলে মহাকাশে স্বাধীন কলোনি স্থাপন করতে হবে।
অন্য গ্রহে জায়গা খুঁজতে হবে দ্রুত
পৃথিবীতে মানুষের বিলুপ্তি ঠেকাতে পুরোপুরি প্রযুক্তি সক্ষমতার সন্ধান করতে হবে। বিশেষ করে অন্য গ্রহে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি ও কারিগরি ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন, অধিক জনসংখ্যা ও মহামারিতে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ট্রাম্প
স্টিফেন হকিং মার্কিন প্রেসিডেন্টের কঠোর সমালোচক ছিলেন। প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে ট্রাম্প যখন সই করতে অনীহার কথা জানান, তখন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন হকিং। ওই সম্মেলনে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো দূর করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। গত জুলাই মাসে বিবিসিকে হকিং বলেন, জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারে ঠেলে দেবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী শুক্র গ্রহের মতো হয়ে যাবে, যেখানে তাপমাত্রা ২৫০ ডিগ্রি ছুঁয়ে যাবে, সালফার বৃষ্টি হবে। আমাদের সামনে এখন অন্যতম বড় বিপদ এই জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা পদক্ষেপ নিলে এ বিপদ প্রতিরোধ করতে পারি।
ট্রাম্পের সমালোচনা করে হকিং বলেন, জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীটার পরিবেশের ক্ষতি করছে, আমাদের ও শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।
এসডব্লিউএসএস/১৫২৫
আপনার মতামত জানানঃ