দিন শুরু হয় ও শেষ হয় স্মার্টফোন দিয়ে। খাবার অর্ডার করা হোক বা অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম ভাঙানোই হোক স্মার্টফোনের উপরেই ভরসা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এমনকী, দিনে আপনি কতটা জল খেলেন বা কতটা হাঁটলেন সেটাও বলে দিতে পারে স্মার্টফোনের অ্যাপ। কিন্তু নিঃশব্দে এই মুঠো যন্ত্র কতটা ক্ষতি করে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন মোবাইল আমাদের শরীরের ভেতরে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সানশাইন ইউনিভার্সিটি গবেষণা হয়েছে এই সম্পর্কে। সেই গবেষণা থেকেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন মোবাইল ঘাটার ফলে মাথার পেছনের একটি হার ক্রমশই উঁচু হয়ে যাচ্ছে। এটি অনেকটা শিং-এর মতোই দেখতে।
অফিস, স্কুল অথবা কলেজ। চোখের সামনে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে শিংওয়ালা বিচিত্র সব মানুষ। রাস্তার মোড়ে বিক্রি হচ্ছে শিং সাজানোর উপকরণ। কিংবা পার্কের বেঞ্চে বান্ধবীর শিং ধরে টেনে খুনসুটি করছেন বিশেষ বন্ধুটি। আজ না হলেও দশ বছর পর এমন দৃশ্য চোখে পড়তে পারে চারপাশে। হ্যাঁ, গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।
জানা গেছে, এক নতুন অভিযোজনে সত্যিই নাকি শিং গজাচ্ছে মানুষের। বদলে যাচ্ছে করোটির আকার আকৃতি। আর এই সব কিছুর জন্যই গবেষকরা দায়ী করছেন স্মার্ট ফোনকে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায় এ ব্যাপারে লিখেছেন দুই বায়োমেকানিকস বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলিয়ার কুইনসল্যান্ডের সানসাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষকের প্রতিবেদন নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
‘আধুনিক জীবন যেভাবে মানুষের করোটিতে বদল ঘটাচ্ছে’ শিরোনামে। তাতে তারা জানিয়েছেন, মানুষের আধুনিক জীবন প্রায় পুরোটাই স্মার্ট ফোন কেন্দ্রিক বা হাতে ধরে কাজ করা যায়, এমন যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। তাতে এই শিং গজানোর প্রবণতা আরো বাড়ছে।
বিশেষ করে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অল্প বয়সিদের মধ্যেই। জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অল্প বয়সে হাড় তখনও সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয় না। ফলে সহজেই সেই হাড় উঁচু হতে থাকে। এর থেকে মাথায় ও শিরদাঁড়ায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়া শুরু হয়। তবে শুধু স্মার্ট ফোন নয় যে কোনও রকমের যন্ত্র এমন ফলাফল ঘটাতে পারে। ঘাড় নীচু করে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে এর থেকে ঘাড়েও ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু এখন আর শুধু ব্যথা নয়। অতিরিক্ত ব্যবহারে মাথায় শিং পর্যন্ত গজিয়ে উঠছে।
অবশ্য শিংওয়ালা মানুষ বলতে নয়য়ের দশকের যে টিভি বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে, মোটেই তেমন দেখতে লাগবে না আমাদের। কারণ, এই শিং গজানোর সম্ভাবনা একটিই। আর শিংটি গজাবেও মাথার পেছন দিকে আমাদের ঘাড় আর মাথার ঠিক মাঝখানে।
কারণ, স্মার্টফোন হোক বা ট্যাবলেট কিংবা নোটপ্যাড, সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় ঘাড় নিচু হয়ে থাকে আমাদের। সেই ভার বইতে হয় ঘাড় আর মাথার মাংসপেশীকে। আর ঠিক এই সমস্যা থেকেই অভিযোজনে মাথার ভার রাখতে একটি বিকল্প হাড় গজাচ্ছে ঘাড়ের ঠিক উপরে।
চিকিৎসার পরিভাষায় আপাতত এই ধরনের হাড় গজানোকে ‘টেক্সট নেক’ বলা হচ্ছে। শিংয়ের মতো যে হাড়টির জন্য ঐ সমস্যা তৈরি হবে, তার দৈর্ঘ্য খুব বেশি হলে হবে ১০ মিলিমিটার। স্মার্টফোনের প্রভাবে এটি দ্বিতীয় হাড়ের অসুখ।
এর আগে ‘টেক্সট থাম্ব’-এর শিকার হয়েছেন বা এখনো হচ্ছেন অনেক রোগীই। ভেবে দেখুন তবে কেমন দেখতে লাগবে সেই শিংওয়ালা মানুষদের!
এসডব্লিউএসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ