কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমার বোন (শেখ হাসিনা) ভালোভাবে দেশ চালাতে পারছেন না।’
শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের হামিদপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এর আয়োজন করে।
একই সাথে ‘বর্তমান বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান ভালো ছিল’—সম্প্রতি করা বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘তাহলে আপনি (মির্জা ফখরুল) পাকিস্তান চলে যান।’ জনসভায় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়েরও সমালোচনা করেন তিনি।
এদিকে, গত ১১ তারিখে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একই দিন ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন স্থানে হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের বাধায় বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। লাঠিচার্জ ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, নওগাঁ, গাজীপুরের শ্রীপুর, বরগুনার পাথরঘাটায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, নোয়াখালীর চাটখিল, নাটোর, ভোলা, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলা ও বাধার ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালী, নরসিংদীসহ আরও বিভিন্ন জেলায়। বিএনপি দাবি করেছে অন্তত ৫০টি’র বেশি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২ শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। ৩ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপ বাদ দিলেও অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে গুম, খুন, নির্যাতনসহ সব ধরণের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রভাবশালী সিনেটর জ্যানেট রাইস। অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং দেশে দেশে মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ম্যাগনেটস্কি আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞা প্রদানের বিষয়টি পর্যালোচনার তিনি এই আহ্বান জানান।
তিনি জানান, দুঃখজনকভাবে আমরা দেশটির সরকার মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো অব্যাহত রয়েছে বলে দেখছি। আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚তদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তাদের অনেকেই নিউ সাউথ ওয়েলসে থাকেন।
সম্প্রতি আমি তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। তাদের সাহস ও ধৈর্য আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। তাদেরকে স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল দাবি করে সিনেটর জ্যানেট পার্লামেন্টে বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের অভিযোগ রয়েছে। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সাংবাদিক এবং সমালোচকদের গ্রেপ্তার করছে। দেশের সুশীল সমাজের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সমকামীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ব্যর্থ হয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং নারীরা ব্যাপক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি এই নৃশংসতাকে চিহ্নিত করা এবং দেশটিতে মানবাধিকার সুরক্ষায় যা যা করা প্রয়োজন তা করার আহ্বান জানাই।
এমন পরিস্থিতিতে এবার বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির দিন তথাকথিত ’শান্তি সমাবেশের’ আবরণে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতিকে সংঘাতপূর্ণ ও রক্তপাতমুখী করার অপচেষ্টা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।
আজ রোববার স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে জেএসডি নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে দেশের জনগণ যখন জীবনপণ মুক্তির লড়াইয়ে নিয়োজিত তখন গণহত্যায় উন্মত্ত পাকিস্তানি দখলদার শাসকরা সারাদেশে ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী জনগণের ‘গণ ইচ্ছার’ বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে।
এরাই পরবর্তীতে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণে জড়িত হয়ে পড়ে এবং রাজাকার-আলবদর হিসেবে চিহ্নিত হয় যা আজও সমাজে ক্ষত হিসেবে বিদ্যমান। জনগণের আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য বল প্রয়োগ করে- হত্যা, সংঘর্ষ ও গ্রেফতারের নামে শাসকদের ‘শান্তি সমাবেশ’ সম্পর্কে এদেশের জনগণ পরিচিত।
নিপীড়ন-নির্যাতনের ভয়ঙ্কর বাস্তবতায় সরকারের বয়ানে শান্তি সমাবেশের কথা শুনলেই ৭১ সালের দুঃশাসনের চিত্র ভেসে ওঠে এবং জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল (শনিবার) সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। একই দিন ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের নামে আওয়ামী লীগ উস্কানিমূলক পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত সূত্রপাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
বিএনপি’র দাবি মতে, কমপক্ষে ৫০টির বেশি স্থানে আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচিতে হামলা করে তিনশত নেতাকর্মীকে আহত করেছে এবং ২০০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এগুলো শান্তি সমাবেশের নামে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর রক্তপাতের দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গণ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান করে, ক্ষমতা রক্ষার অগণতান্ত্রিক পথে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দল ‘৭১- এর পরাজিত পাকিস্তানি দখলদারদের ‘শান্তি কমিটি’র কলঙ্কে চিহ্নিত হবে- এটা কেউ প্রত্যাশা করে না।
শান্তি সমাবেশের নামে বল প্রয়োগের হাতিয়ার ব্যবহার করার অপরাজনীতি থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।
এসডব্লিউএসএস/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ