সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ খবর প্রচারের অভিযোগে সৌদি আরবে আওয়াদ আল-কুরনি নামে এক সংস্কারবাদী অধ্যাপককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬৫ বছর বয়সি আইনের অধ্যাপক আওয়াদ আল-কুরনিকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর সংস্কারবাদীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
আল-কুরনির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, গার্ডিয়ানকে সেগুলোর বিস্তারিত জানিয়েছেন তার ছেলে কুরনি-নাসের। গত বছর সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। নাসের এখন যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার প্রত্যাশায় আছেন।
সৌদির গণমাধ্যমগুলোতে আল-কুরনিকে একজন ‘বিপজ্জনক’ ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে তুলে ধরা হয়। তবে সংস্কারবাদীদের দাবি, আল-কুরনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাকে টুইটারে ২০ লাখ মানুষ ফলো করেন।
এর আগে টুইটার ব্যবহার করায় সালমা আল-শিহাব নামে এক নারীকে ৩৪ বছর এবং নোরা আল-কাহতানিকে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আল-কুরনির মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৭ সালে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স হন। এর পর তিনি দেশটিতে ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত নভেম্বরে মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরব ১০ দিনে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাদের মধ্যে ছুরি দিয়ে অনেকের শিরচ্ছেদও করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি, চারজন সিরিয়ান, দুইজন জর্ডানের এবং তিনজন সৌদি আরবের নাগরিক ছিলেন।
দুই বছর আগে সৌদি আরব অঙ্গীকার করে, তারা অপরাধীদের এমন সাজা কমাবে। তুরস্কে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডের পর এই অঙ্গীকার করেছিল যুবরাজ সালমান। তবে সম্প্রতি দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড আরও বাড়িয়েছে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর সৌদিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১২ মার্চ একদিনে দেশটিতে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় যা সংখ্যায় ২০২১ বছরের মোট সংখ্যার তুলনায় বেশি।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ বলছে এদের মধ্যে ইয়েমেন এবং সিরিয়ার নাগরিক ছিল। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ থেকে বিপথগামীতা, এরকম নানা ‘জঘন্য অপরাধের’ অভিযোগ ছিল বলে সংবাদ সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।
এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী, আল কায়েদা, হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য ছিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্থাপনা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ এবং চোরাচালানের মাধ্যমে সৌদি আরবে অস্ত্র প্রবেশ এরকম নানা ধরনের অভিযোগ ছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে বিশ্বে যে সব দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে থাকে সৌদি আরব তাদের মধ্যে অন্যতম। শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ইরান, মিশর এবং ইরাক।
সৌদি আরবে জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। ২০২১ সালে সৌদি আরব ৬৯ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ইরানে।
এসডব্লিউএসএস/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ