গ্রিনল্যান্ড বলতে বরফে আচ্ছাদিত বিস্তীর্ণ এক এলাকা বোঝায়। কিন্তু পরিস্থিতি সব সময় এ রকম ছিল না। ডেনমার্কের গবেষকেরা বলেন, ২০ লাখ বছর আগে এখানকার তাপমাত্রা ছিল ১১ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা সেই সময়কার প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জীবাণু থেকে ডিএনএ শনাক্ত করেছেন। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে প্রাচীন ডিএনএ শনাক্তের ঘটনা।
উল্লেখ্য, বিপুল পরিমাণ বরফ গলার কারণেই সম্ভব হয়েছে এটা। এখানে বলে রাখি, পৃথিবীজুড়ে বরফ গলার হার বাড়ছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ গলেছে। এটি পুরো যুক্তরাজ্যকে ১০০ মিটারের আস্তরণে ঢেকে দিতে সক্ষম। এ সময়ে বরফ গলার হার বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিডসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, ডেনমার্কের গবেষকেরা গ্রিনল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করা পলি থেকে এই ডিএনএ শনাক্ত করেন। তাদের ধারণা, একসময় গ্রিনল্যান্ড ছিল নানা প্রাণী ও উদ্ভিদের রাজ্য।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গত বুধবার বলেন, মাস্তোদোন, রেইনডিয়ার, খরগোশসহ বিভিন্ন প্রাণী থেকে শুরু করে পপলার, বার্চের মতো বিভিন্ন উদ্ভিদ, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালের ডিএনএ তারা শনাক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ডিএনএ মূলত জীবন্ত প্রাণীর জিনগত তথ্য বহনকারী নিজস্ব প্রতিরূপ তৈরিতে সক্ষম উপাদান। একে জীবনের নীলনকশাও বলা হয়ে থাকে।
মাস্তোদোন মূলত আধুনিক হাতির মতোই একধরনের প্রাণী। একসময় এটি উত্তর ও মধ্য আমেরিকাজুড়ে বিচরণ করত। ১০ হাজার বছর আগে বরফ যুগ শুরু হওয়ার পর অন্যান্য বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীর সঙ্গে মাস্তোদোনেরও বিলুপ্তি ঘটে।
গবেষকদের নতুন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে মাস্তোদোনের বৃহত্তর বিচরণক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য জানা গেল।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে। গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা ডেনমার্কের লান্ডবেক ফাউন্ডেশন জিওজেনেটিকস সেন্টারের পরিচালক এসকে উইলারস্লেভ বলেন, মাস্তোদোনের ডিএনএ পাওয়ার বিষয়টি ছিল দারুণ চমক।
গ্রিনল্যান্ডে এর আগে কখনো এর অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সবচেয়ে বড় চমক হলো, সেখানে অনন্য এক বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ পাওয়া। সেখানে শীতপ্রধান এবং নাতিশীতোষ্ণ উভয় প্রজাতির জন্য জুতসই অনন্য বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছিল।
উইলারস্লেভ বলেন, ‘কেউ হয়তো ভাবেনি যে ২০ লাখ বছর আগে গ্রিনল্যান্ডে এ ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আগামী কয়েক বছরে আমরা গ্রিনল্যান্ডের যে পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছি, ওই সময় ঠিক এমনই পরিবেশ ছিল সেখানে।’
গবেষকেরা বলেন, তারা ৪১ ধরনের খনিজসমৃদ্ধ পলি থেকে ডিএনএ শনাক্ত করেন। সেখানে ১০০ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের ডিএনএ মিলেছে। ২০০৬ সালে গ্রিনল্যান্ডে খনন করে ওই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এত দিন ওই নমুনা থেকে কোনো ডিএনএ শনাক্ত করা যায়নি। বর্তমানে উন্নত ডিএনএ শনাক্তকরণ পদ্ধতির কারণে ওই নমুনা থেকেই ২০ লাখ বছর আগের প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জীবাণুর ডিএনএ পাওয়া গেছে।
তবে উইলারস্লেভ বলেন, যে ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে, তা ব্যবহার করে বিলুপ্ত প্রাণী আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে তাদের গবেষণা থেকে কীভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদ বৈশ্বিক উষ্ণতা সহনীয় হয়ে উঠতে পারে, সে তথ্য জানা যাবে।
গবেষকেরা বলেন, তারা ৪১ ধরনের খনিজসমৃদ্ধ পলি থেকে ডিএনএ শনাক্ত করেন। সেখানে ১০০ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদের ডিএনএ মিলেছে। ২০০৬ সালে গ্রিনল্যান্ডে খনন করে ওই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এত দিন ওই নমুনা থেকে কোনো ডিএনএ শনাক্ত করা যায়নি। বর্তমানে উন্নত ডিএনএ শনাক্তকরণ পদ্ধতির কারণে ওই নমুনা থেকেই ২০ লাখ বছর আগের প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জীবাণুর ডিএনএ পাওয়া গেছে।তবে উইলারস্লেভ বলেন, যে ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছে, তা ব্যবহার করে বিলুপ্ত প্রাণী আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
তবে তাদের গবেষণা থেকে কীভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদ বৈশ্বিক উষ্ণতা সহনীয় হয়ে উঠতে পারে, সে তথ্য জানা যাবে।এর আগে হাতি গোত্রের আরেক প্রাণী ম্যামথের সবচেয়ে প্রাচীন ডিএনএ শনাক্ত করা হয়েছিল ১২ লাখ বছর আগে। গ্রিনল্যান্ডের বরফ জমাট বাঁধা পরিবেশে তা টিকে ছিল। ম্যামথের তুলনায় মানব প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সের উৎপত্তি হয়েছিল তিন লাখ বছর আগে।
এসডব্লিউএসএস/১৮১৩
আপনার মতামত জানানঃ