প্রত্নতাত্ত্বিকরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল থেকে নকশা খোদাই করা ২৭০০ বছর পুরনো শিলালিপির সন্ধান পেয়েছেন। ঐ শিলালিপিগুলোতে বেশ চমকপ্রদ বিষয় খোঁজে পান গবেষকরা। খবর গার্ডিয়ানের
গত বুধবার একজন প্রত্নতাত্ত্বিক বলেন, ঐ শিলালিপিগুলো আসুরীয় সাম্রাজ্যের সময়কার যুদ্ধের দৃশ্য ও গাছ খোদাই করা রয়েছে।
জানা গেছে, মসুল থেকে খোদাইকৃত ঐ মার্বেলের স্লাবগুলোর সন্ধান পান বিশেষজ্ঞদের একটি দল। প্রাচীন মাশকি ফটক পুনঃসংরক্ষণে কাজ করছে দলটি। ২০১৬ সালে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট গ্রুপ ঐ ফটকটি গুড়িয়ে দিয়েছিল।
পুনঃসংরক্ষণ কাজের প্রধান ফাদহিল মোহাম্মদ বলেন, দলটি ‘শিলালিপি, আলংকারিক অঙ্কন ও লেখাসহ আটটি ম্যুরাল’র সন্ধান পেয়ে অবাক হয়েছেন। মাশকি ফটক ছিল মেসোপটেমিয়ার ঐতিহাসিক অঞ্চলের এ অংশের একটি প্রাচীন আসুরীয় শহর নিনেভের বৃহত্তম ফটকগুলোর মধ্যে একটি।
নকশা খোদাই করা শিলালিপিগুলোর একটিতে দেখা যায়, এক যোদ্ধা একটি তীর নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর অন্য শিলালিপিগুলোতে তালগাছ খোদাই করা রয়েছে।
ফাদহিল আরো বলেন, এ ম্যুরালগুলোর লেখা রাজা সেনাকেরিবের শাসনামলে নির্মিত বা তৈরি করা হয়। রাজা সেনাকেরিব নব্য-আসুরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন। তিনি ৭০৫ থেকে ৬৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন।
বিগত কয়েক বছরের টানা খরায় ইরাকের অধিকাংশ জলাধারই শুকিয়ে গিয়েছে। দেখা দিয়েছে পানির সংকট। ফলে লোকজন দূরদূরান্তে যেতে বাধ্য হচ্ছে পানির সন্ধানে। সম্প্রতি পানির সন্ধানে গিয়েই প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো এক শহরের ধ্বংসাবশেষের দেখা মিলেছে।
যেখানে একসময়ে ছিল একটি প্রাসাদ এবং একটি বিস্তৃত দুর্গ। ব্রোঞ্জ যুগের সময়ে এখানে বসতি গড়ে উঠেছিল। শহরটি টাইগ্রিস নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। বর্তমানে এখানে রয়েছে মসুল বাঁধ। বাঁধটি পুনরায় পানিতে ভরাট হবার আগে প্রাচীন শহরটির ধ্বংসাবশেষ খনন করতে শুরু করেছিলেন গবেষকরা।
এ ম্যুরালগুলোর লেখা রাজা সেনাকেরিবের শাসনামলে নির্মিত বা তৈরি করা হয়। রাজা সেনাকেরিব নব্য-আসুরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন। তিনি ৭০৫ থেকে ৬৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরার পরিস্থিতি কীভাবে অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারগুলি সামনে এনেছে তার সর্বশেষ উদাহরণ গত মাসে দেখা গেছে। নেভাডায়, লেক মিডে পানির স্তর হ্রাস পেয়ে কয়েক দশক পুরানো কঙ্কালের অবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।
ইরাকের মসুলে অবস্থিত মসুল ড্যামের জলাধারটিই ইরাকের সবচেয়ে বড় জলাধার। তীব্র গরম ও খরায় এই জলাধারের পানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে জলাধারের তলদেশের অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে এসেছে। আর উন্মুক্ত জলাধারের তলদেশেই দেখা পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো ওই শহরের।
গবেষকেরা বলছেন, ওই শহরটি মিসরীয় শাসক ফারাও তুতেনখামেনের শাসনামলের সমসাময়িক। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মিত্তানি সাম্রাজ্য খ্রিষ্ট পূর্ব ১৫০০ সাল থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব ১৩০০ সাল পর্যন্ত তাদের শাসন চালিয়েছে।
এ বছরের শুরুর দিকে, ওই স্থানে একটি বড় ধরনের শহর থাকার সম্ভাবনা দেখতে পান। সেসময় তারা শহরটিতে গুদামঘর, শিল্প কারাখানার দালান এবং দুর্গের নমুনা আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তারা সেখান থেকে কয়েক হাজার বছরের পুরোনো কিছু তৈজসপত্রও খুঁজে পান। সেসময় তারা কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা বেশ কিছু মাটির ফলকও উদ্ধার করেছিলেন।
এর আগে ইরাকে মাটির তৈরি বহু পুরনো একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ডাই কার অঞ্চলে সন্ধান পাওয়া মসজিদটি ৬০ হিজরি অর্থাৎ ৬৭৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে উমাইয়া যুগে তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে।
যেহেতু ইসলামের প্রাথমিক যুগের সুনির্দিষ্ট ইতিহাস আমাদের অনেকটাই অজানা, এ কারণে ওই সময়ের একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়ার ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০৯
আপনার মতামত জানানঃ