
পাকিস্তান ও তুরস্ক বরাবরই বন্ধুরাষ্ট্র। সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘে তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল আগেই। সেই সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছিল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। এবার পাকিস্তানকে সাইবার বাহিনী গঠনের বিষয়ে তুরস্ক গোপনে সাহায্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সুইডেনের স্টকহোমভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা নর্ডিক মনিটরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। নর্ডিক মনিটরের বরাত দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, তুরস্ক গোপনে পাকিস্তানে জনমত গঠন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলমানদের ভাবনাকে প্রভাবিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি সাইবার বাহিনী গঠন করছে। সেই সঙ্গে এই বাহিনী পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের সমালোচনাকে দুর্বল করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শেহরিয়ার খান আফ্রিদির মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনার সময় এই সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি নিয়ে প্রথম কথা হয়েছিল। ইসলামাবাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশির ভাগ কর্মীর কাছে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ইমরান খান সেই সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন এবং সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন।
২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর তুরস্কের একটি স্থানীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোয়লু এই গোপন অভিযানের কথা প্রথম প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, তুরস্ক একটি দেশে সাইবার সেনাবাহিনী গঠনে সাহায্য করছে। তবে সোয়লু কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তিনি পাকিস্তানের কথাই বলছেন। কারণ তিনি এমন একটি দেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেটি তুরস্ক থেকে সরাসরি পাঁচ বা ছয় ঘণ্টার ফ্লাইট। এ ছাড়া সম্প্রতি পাকিস্তান তুরস্কের কাছে সাইবার সহায়তা চেয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
সুলেইমান সোয়লু কোনো মামুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের হয়ে সাইবারস্পেসে ট্রল ও বট বাহিনী চালানোর জন্য কুখ্যাত তিনি। ২০১৬ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে এ ধরনের গোপন অভিযানের একাধিক প্রকল্পে কাজ করেন সোয়লু। তিনি ২০১৪ সালে এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় গবেষণা ও উন্নয়ন নিয়ে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন চালিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া টুইটারে বিশিষ্ট ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আক্রমণ করতে একটি দলও গঠন করেছিলেন সোয়লু, যা বেশ প্রভাব ফেলেছিল তুরস্কের রাজনীতিতে।
সেই সঙ্গে এই বাহিনী পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের সমালোচনাকে দুর্বল করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
তুরস্ক আন্তর্জাতিক পরিসরে যেমন ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীরের বিষয়ে পাকিস্তানকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয় পাকিস্তান তেমনই তুর্কি সাইপ্রাসেও আঙ্কারার নীতিকে সমর্থন করে।
২০১৬ সালটি ছিল তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর বছর। একদিকে দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলা, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সামারিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা। সব মিলিয়ে তুরস্ক পার করছিল এক ক্রান্তিকাল।
আর এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আঙ্কারার সহযোগিতায় পাকিস্তান সেনাপ্রধানকে প্রেরণ করে। সামারিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণাৎ এরদোগান সরকারকে সমর্থন দেয়। সামারিক অভ্যুত্থানের পেছনের মূল হোতা গুলেন আন্দোলন বা তুরস্ক সকারের মতে ফেতুল্লাহ সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে আঙ্কারার পাশে দাঁড়ায় ইসলামাবাদ। তুরস্কের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পাকিস্তানও এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
আধুনিক তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারত ভেঙে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র জন্ম নেওয়ার কিছুদিন পরেই।
ভারত পাকিস্তান বিভক্তির পর যে দেশগুলো খুব দ্রুত পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দেয় তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের জাতিসংঘ সদস্য পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা অপরিসীম।
ভারত বিভাজনের কয়েক মাস পর, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান ব্রিটিশ মুদ্রা ব্যবহারের পরিবর্তে “রুপি ” নামে নিজস্ব মুদ্রা চালু করে এবং তখন তুরস্ক এই নতুন রুপি মুদ্রণ করে দেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫১
আপনার মতামত জানানঃ