ভারতের বিহারে ভিন্ন জাতের একজনকে বিয়ে করায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে তার পরিবার গুলি করে হত্যা করেছে। দেশটির পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তরুণী শিবানী সোলাঙ্কির ভাই এবং চাচাতো ভাইকে ধরার জন্য তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশ তার চাচাকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সুপার (এসপি) স্বর্ণ প্রভাত বলেছেন, শিবানী সোলাঙ্কিকে গত সোমবার রাতে ভাগলপুরে তার পরিবারের তিন সদস্য গুলি করে হত্যা করেছিল। যারা অন্য জাতের একজনকে বিয়ে করায় সোলাঙ্কির ওপর বিরক্ত হয়েছিল।
তিনি জানান, ৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তরা গত মাসে তাদের বিয়ের পর থেকেই তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় উঁচু জাতের ও-ই তরুণী প্রিন্স নামের একজনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেন। তবে প্রিন্স কোন জাতের এবিষয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ অফিসার বলেন, আমরা প্রিন্সকেও জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ স্ত্রীকে হত্যার পরেও পুলিশের সামনে তিনি হাজির হননি।
তিনি জানান, তরুণী দীপাবলি উদযাপন করতে তার নিজ গ্রামে এসেছিলেন। তার বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথে তার ভাই সাহিল সিং তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করে এবং মধ্যরাতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন।
তরুণী দীপাবলি উদযাপন করতে তার নিজ গ্রামে এসেছিলেন। তার বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথে তার ভাই সাহিল সিং তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করে এবং মধ্যরাতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সাজোর থানার স্টেশন হাউস অফিসার মহাশ্বেতা সিং জানিয়েছেন, ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর তরুণীর দেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার ভাই এবং চাচাতো ভাই ঘটনার পর থেকে পলাতক। পুলিশ দুজনকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা ওই নারীর বাবা ও মায়ের কাছ থেকে পৃথকভাবে দুটি অভিযোগ পেয়েছে।
তাদের অভিযোগে, তরুণীর মা তার ছেলেকে অভিযুক্ত করেছেন যেখানে বাবার অভিযোগে তা উল্লেখ করা হয়নি।
সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনার-কিলিং হল কাউকে নিজের পরিবার বা গোত্রের সম্মানহানির দায়ে ঐ পরিবার বা গোত্রের কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি, যাকে সম্মানহানির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করা। যার মাধ্যমে বংশের মর্যাদা এবং ধর্মীয় সম্মান রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। এই হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীদের বংশের মর্যাদা এবং ধর্মীয় সম্মানহানির উপযুক্ত প্রতিকার হয়েছে বলে মনে করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনার কিলিং প্রচলিত। নারীরা হলো অনার কিলিং এর প্রধান শিকার।
ভারতের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হলেও জাত-প্রথা নিয়ে আছে অনেক গোঁড়ামি। বর্ণের প্রভাবে হিন্দু সংস্কার এবং জন্মের সময় উচ্চবংশের সাথে নিন্মবংশের থাকে বিস্তর ফারাক।
মূলত প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডের জন্য পরিবার, ছেলে এবং মেয়েকে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরিবারের কাছে বিয়ের চেয়ে জাত-ধর্ম-বর্ণ তখন মূখ্য হয়ে যায়।
ভারতে ইদানিং যা দেখা গেছে তা হল বর্ণাশ্রম না মেনে নিজের জাতের বাইরে কেউ যদি বিয়ে করে তাহলে পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে এমনটি ধরে নেয়া হয়৷ তখন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগে৷ যেভাবেই হোক পরিবারের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং তা করা যাবে যদি মেয়েটিকে হত্যা করা হয়৷ এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে বাবা-ভাই, আত্মীয় স্বজনরা পর্যন্ত থাকে৷ কিন্তু অত্যন্ত আদরের কন্যা বা বোনকে হত্যার পর পরিবারের সম্মান কি আদৌ ফিরে আসে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মান রক্ষার্থে খুন— অনার কিলিং। শব্দগুলো আর নতুন করে স্তম্ভিত করে দেয় না। মেয়েরা এখন এই শব্দগুলো শুধু নয়, এই মৃত্যুগুলোর সঙ্গেও পরিচিত। অনেক বছর হয়ে গেল এই নৃশংসতার, তাই মেয়েরাও বোধহয় এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তারাও জেনে গেছে যে যেকোনও সময়ে পরিবার, সমাজ সব জায়গা থেকে বীভৎসতম আঘাতটা তারা পেতে পারে। যত বড় চাকরিই করুক বা যত সহজ-সাধাসিধে একটা জীবনের স্বপ্নই দেখুক না কেন, জীবনটা যখনই নিজের হাতে নিতে চান, যেমনই হোক একটা নিজস্ব যাপনের চিন্তা করেন, তখনই মেয়েদের জীবনটাই একটা প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। বেঁচে থাকা, মরে যাওয়া সবই যেন অন্যের উপর নির্ভরশীল— বিশেষত পরিবারের পুরুষদের। অবশ্য মানসিকতাটা যেখানে পুরুষতান্ত্রিক, সেখানে পুরুষ, নারী নির্বিশেষে যে কেউই এই নির্যাতনে, এই হত্যায় শামিল হয়ে যান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ